ঢাকা, রবিবার   ১২ মে ২০২৪

মালদ্বীপের অজানা রহস্য

প্রকাশিত : ১৭:০৬, ১৭ মে ২০১৯

মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানী মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্কের সদস্য। এটি বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই মালদ্বীপ। এর মধ্যে মাত্র ১৯৮টিতে মানুষ বসবাস করে।

জনসংখ্যা সমগ্র দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এবং জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় ঘনত্ব হচ্ছে রাজধানী দ্বীপ মালেতে।

পানীয় জল এবং আবাদি জমির সীমাবদ্ধতা, পাশাপাশি জনসংখ্যার অত্যাধিক ভিড়ের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মালেতে বসবাসকারী মানুষদের।

মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত ‘মালে দিভেহী রাজ্য’ হতে উদ্ভূত যার অর্থ হল মালে অধিকৃত দ্বীপরাষ্ট্র। কারো কারো মতে সংস্কৃত ‘মালা দ্বীপ’ অর্থ দ্বীপ-মাল্য বা ‘মহিলা দ্বীপ’ অর্থ নারীদের দ্বীপ হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত। প্রাচীন সংস্কৃতে যদিও এরকম কোনও অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় না।

তবে প্রাচীন সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ নামক এক অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। লক্ষদ্বীপ বলতে মালদ্বীপ ছাড়াও লাক্কাদ্বীপ পুঞ্জ অথবা চাগোস দ্বীপপুঞ্জকেও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। অপর একটি মতবাদ হল তামিল ভাষায় ‘মালা তিভু’ অর্থ দ্বীপমাল্য হতে মালদ্বীপ নামটি উদ্ভূত ।

মধ্যযুগে ইবন বতুতা ও অন্যান্য আরব পর্যটকেরা এই অঞ্চলকে ‘মহাল দিবিয়াত’ নামে উল্লেখ করেছেন। আরবিতে মহাল অর্থ প্রাসাদ। বর্তমানে এই নামটিই মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে লেখা হয়।

দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকার প্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন এবং তিনি হচ্ছেন তাদের প্রধান। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। দেশটিতে ৫০ সদস্যের একটি মজলিসে সুরা আছে। এরা পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই ৫০ সদস্যের মধ্যে আটজন প্রেসিডেন্ট কর্র্তৃক মনোনীত হন।

এই একটি উপায়েই নারীরা সংসদে প্রবেশের সুযোগ পান। দেশটিতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ২০০৫ সালে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ দলের নাম ‘দ্য মালদ্বীপিয়ান পিপলস পার্টি’।

একই বছর আরেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয় ‘মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ হিসেবে। এভাবেই দেশটিতে বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়।

মালদ্বীপের প্রশাসনিক অঞ্চল বলতে বুঝানো হয় সরকারের বিভিন্ন স্তরকে যাদের নিয়ে মালদ্বীপের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গঠিত। বিকেন্দ্রীকরণ প্রবিধান ২০১০ অনুসারে মালদ্বীপের প্রশাসনিক অঞ্চল অ্যাটোল, দ্বীপ এবং নগরে বিভক্ত।

প্রতিটি প্রশাসনিক স্তর নিজস্ব পরিচালনা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়, যা স্বায়ত্বশাসন পদ্ধতির অধীনস্থ। ভৌগোলিকভাবে মালদ্বীপ গঠিত হয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক অ্যাটোল আর তার সঙ্গে কিছু দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীর দ্বারা যা উত্তর থেকে দক্ষীণে বিন্যস্ত। প্রশাসনিকভাবে মালদ্বীপে বর্তমানে ১৮৯টি দ্বীপ, ১৯টি অ্যাটোল এবং ২টি নগর রয়েছে।

ক্ষুদ্র হলে দেশটিতে আছে নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দ্য মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (এমএনডিএফ) নামে তাদের একটি নিজস্ব যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা।

এ বাহিনীর হাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমোদন দেওয়া আছে। কোস্টগার্ড, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস, ইনফেন্ট্রি সার্ভিস, ডিফেন্স ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমএনডিএফ’র বাহিনী পরিচালনা করে থাকে।

বর্তমানে মালদ্বীপের অর্থনীতি আহরণের সবচেয়ে বড় শিল্প হচ্ছে পর্যটন যা জিডিপির ২৮ শতাংশ। বৈদেশিক বিনিময় প্রাপ্তির ৬০ শতাংশ এরও বেশি।

মৎস্য শিকার হচ্ছে মালদ্বীপের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় শিল্প ক্ষেত্র। সরকার কর্তৃক ১৯৮৯ সালে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি উত্তোলিত কয়লা আমদানি এবং বেসরকারি খাতে কিছু রপ্তানি চালু করে। পরবর্তীতে, এটি আরও বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন আইন প্রশস্ত করেছে।

কৃষি এবং উৎপাদন অর্থনীতিতে একটি গৌণ ভূমিকা পালন করে, চাষযোগ্য জমির সীমিত প্রাপ্যতা এবং স্বদেশি শ্রমের অভাব দ্বারা এটি সীমাবদ্ধ। সবচেয়ে প্রধানতম খাবারগুলি আমদানি করা হয়।

শিল্প ক্ষেত্রে মালদ্বীপে প্রধানত রয়েছে গার্মেন্টস উৎপাদন, নৌকা নির্মাণ এবং হস্তশিল্প। এটি জিডিপির প্রায় ১৮ শতাংশ। মালদ্বীপের কর্তৃপক্ষ নিম্নভূমিতে ক্ষয় এবং সম্ভাব্য বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।

 

এমএইচ/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি