ঢাকা, রবিবার   ১২ মে ২০২৪

মায়ের দোয়া পাশে আছে বলেই মার্কিন সিনেটর হয়েছি: চন্দন

প্রকাশিত : ১৮:৩৫, ১৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২৮, ১৭ মে ২০১৯

৩৯ বছর পর দেশে ফিরে মা ও জন্মভূমির ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন। যিনি শেখ রহমান নামেই বেশি পরিচিত। বাড়ি ফেরার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কিছুতেই আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না মমতাময়ী মা সৈয়দা হাজেরা খাতুন। ছেলের প্রতি মায়ের এতো ভালোবাসা আর মমত্ববোধে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সিনেটর চন্দনও।

তিনি বলেন, ‘মায়ের দোয়া ও ভালোবাসা আমার পাশে আছে বলেই আজ আমি মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হয়েছি। আর এই গর্ভধারিণী মাকে দেখতে এবং কাছে পেতেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখানে ছুটে আসা।’

চন্দনের কথা শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় মায়ের চোখ। মুহূর্তেই ছোট্ট খোকার মতো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার কপালে চুমু দিতে থাকে মমতাময়ী মা। সন্তানকে কাছে পেয়ে মা হাজেরা খাতুন যেন এখন স্বর্গসুখে ভাসছেন। মা-ছেলের এমন ভালোবাসার দৃশ্য দেখে সেখানে চন্দনকে দেখতে আসা উপস্থিত সবার চোখ ভিজে যায়। সে সময় চন্দনের মা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি মনে করি আমার ছেলে একদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে। হয়তো সেদিন আমি থাকব না, তবে তোমরা তা একদিন দেখতে পারবে।’

কী খাওয়াবেন ছেলেকে, কোথায় ঘুমাতে দেবেন তাকে, কী দেখাবেন তার খোকাকে এ নিয়ে তার দিশেহারা অবস্থা। এদিকে মায়ের এ অবস্থা দেখে চন্দনও অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘ছয় বছর আগে একবার দেশে এসেছিলাম। সেবার মার সঙ্গে দেখা হয়নি। তাই এবারের আসাটা একেবারেই ভিন্ন। প্রায় ৩৯ বছর পর এই প্রথমবারের মতো দীর্ঘসময় বাড়িতে সব ভাইবোনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হলো।’

জর্জিয়ায় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে চন্দন বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি কিংবা দক্ষিণ এশিয়ান অথবা মুসলমান এমন পরিচয় উপস্থাপন করলে কখনই নির্বাচিত হতে পারতাম না। কারণ আমার এলাকার ভোটারের সিংহভাগই এসব অঞ্চল বা ধর্মের নন। সেজন্য আমাকে ওইসব ধর্মবিশ্বাসীর যাবতীয় কাজে পাশে থাকতে হয়েছে। গির্জা, সিনেগগ ও চার্চে গেছি। তারা যেকোনো অনুষ্ঠান করলে সেখানেই যাতায়াত করেছি। তাদের যেকোনো সমস্যাকে নিজের বিবেচনায় নিয়েছি। এভাবে তাদের মন জয় করেছি বলেই নির্বাচনে আমি জয়ী হতে পেরেছি।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শুধু বাঙালি হয়ে থাকলে চলবে না। বাঙালিত্ব হৃদয়ে ধারণ করেই আমেরিকান হতে হবে। কারণ এটি তো বাংলাদেশ নয়। বহুজাতিক সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে পারলেই জননেতা হওয়া সম্ভব। আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ভাগ্য গড়ার উর্বর একটি ভূমি। স্বপ্নপূরণের উদাহরণ প্রতিনিয়ত সেখানে তৈরি হচ্ছে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অকৃপণভাবে কাজ করতে পারলেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, কিশোরগঞ্জের সন্তান চন্দন ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর তিনি নর্থ ক্যারোলিনায় ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া থেকে এমবিএ করেন। চন্দন গত বছর ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলনে জাতীয় কমিটিতে প্রথম বাংলাদেশি কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। মূলধারার রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। গত বছর ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-ফাইভ থেকে লড়েছিলেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে চন্দন মোট ৪ হাজার ২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কার্ট থম্পসন পান ১ হাজার ৮৮৫ ভোট। প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোট দেওয়া ব্যক্তিদের ৬৮ শতাংশই আস্থা রাখেন শেখ রহমানের ওপর। তারপর গত নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে রিপাবলিকান বা অন্য কোনো দল থেকে কোনো প্রার্থী না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

আমেরিকার আইনসভায় প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম বাংলাদেশি শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন। যিনি আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনি এলাকা থেকে স্টেট সিনেটর হিসাবে বিজয়ী হন। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে শেখ রহমানের আগে বাংলাদেশের অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন জামিল ইমরান, ড. রশিদ মালিকশ, নিনা আহমেদসহ অনেকে। কিন্তু তাদের কেউই প্রাথমিক নির্বাচনে বিজয়ের মুখ দেখেননি। এ ক্ষেত্রে শেখ রহমানের স্টেট সিনেটর হওয়াটা এক দারুণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

শেখ রহমানের রাজনৈতিক পরিচয় শুধু জর্জিয়ায় নয়, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। নিউইয়র্কের মার্কিন কংগ্রেসউইম্যান গ্রেস মেং এই প্রাথমিক নির্বাচনে শেখ রহমানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া নিউইয়র্ক ও জর্জিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার নির্বাচনি ব্যয়ের তহবিল গঠনে অর্থ সংগ্রহ করেন তাঁরা।

এক নজরে শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন-

শেখ রহমানের জন্ম ১৯৬০ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায়। তার বাবার নাম শেখ নজিবুর রহমান ও মায়ের নাম সাইয়্যেদা হাজেরা বেগম। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি মেজো। তার এক বোন নাদিরা রহমান জর্জিয়া বাংলাদেশ সমিতির সাবেক সভাপতি। ব্যক্তিগত জীবনে শেখ রহমান বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। তিনি ঢাকার ডনস্‌হাইস্কুল থেকে ইংরেজি মাধ্যমে মাধ্যমিক পাস করে ১৯৮১ সালে। মাধ্যমিকের পরই পাড়ি জমান আমেরিকায়। সে বছরেই তিনি ভর্তি হন নর্থ ক্যারোলাইনার সেন্ট্রাল পিডমন্ট কমিউনিটি কলেজে। সেখানে পড়াশোনা শেষে তিনি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ইউজিএ) থেকে ইকোনমিকস অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজে বিবিএ করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি রেস্টুরেন্টের ডিশ ওয়াশার থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছে। পরে ফুডচেইন পিৎজা হাটের করপোরেট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি আবাসন ব্যবসা ও রেন্টাল প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। দুই বছর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির সবার নজরে আসেন তিনি।

 

টিআই/এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি