ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

রম্য লিখে বিশ্ব বিখ্যাত মার্ক টোয়েন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩২, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২

পৃথিবীর বুকে কালে কালে এমন কিছু মানুষ আসেন, যারা মৃত্যুর পরেও চিরঞ্জীব। তারা দূর আকাশের বুকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বসে আছেন। আমরা তাদের দেয়া উজ্জ্বল আলোয়, আলোকিত হই। আজ এমনি একজন চিরঞ্জীব উজ্জ্বল নক্ষত্র নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যিনি মৃত্যুর শতবছর পরেও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা নিয়ে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে আছেন। তিনি হলেন- বিশ্ব বিখ্যাত মার্কিন রম্য লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সু-বক্তা মার্ক টোয়েন। 

আসল নাম স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স (১৮৩৫-১৯১০)। যদিও ‘মার্ক টোয়েন’ ছদ্মনামেই তিনি বেশি পরিচিত। 

মার্ক টোয়েনের জন্ম মিসিসিপি নদীর উপকূলবর্তী ফ্লোরিডায়। টোয়েনের ভাষায় এই ছােট্ট শহরটি ছিল একটি ‘ঘুমন্ত শান্ত গ্রাম’। এই শহর তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর জন্মের মধ্য দিয়ে মার্কিন সাহিত্যাকাশে জন্ম হয় এক ধুমকেতুর। টোয়েনের বয়স যখন চার, তখনই তাঁর বাবা মিসৌরির হানিবলে চলে যান। বন্দরনগরীতে বেড়ে ওঠা, নানা অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে তাঁর লেখায় প্রভাব ফেলে। 

মার্কের মা ছিলেন পরিহাসপ্রিয় মহিলা। কিন্তু অত্যন্ত অন্যমনস্ক স্বভাবের। মায়ের কাছ থেকে এই দুটি দোষ গুণই মার্ক পেয়েছিলেন। মার্কের বাবা ছিলেন পেশায় আইনজীবী। তিনি ছেলেকে হ্যানিবলের একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে কিছুদিন পড়াশােনার সুযােগ পেয়েছিলেন মার্ক। 

মাত্র বারাে বছর বয়সে ১৮৪৭ খ্রিঃ মার্ক টোয়েনের বাবার মৃত্যু হয়। স্বাভাবিকভাবেই সংসারের দায়দায়িত্বের ভার চাপে তার কাঁধে। তাকে পড়াশােনার পাট চুকিয়ে ১৩ বছর বয়সেই নামতে হল কঠোর কঠিন জীবন সংগ্রামে। 

মার্ক টোয়েইন ছিলেন তার বাবা-মা’র ষষ্ঠ সন্তান। মোট সাতটি ভাইবোন ছিল তার, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন বেঁচে ছিলেন। বাকীরা শৈশবেই মারা যান। 

তিনি প্রথমে টাইপ সেটিং এর কাজ নেন। আগের দিনে পত্রিকায় অক্ষর বসিয়ে লেখা ছাপানো হত। এর জন্য আলাদা আলাদা টাইপ তৈরি করতে হতো। হানিবল জার্নাল নামের পত্রিকায় এই কাজ দিয়ে মার্ক টোয়েন তার কর্ম জীবন শুরু করেন। পত্রিকাটি ছিলো তার বড় ভাই অরিয়নের। সেই পত্রিকাতে তিনি প্রথম লিখতে শুরু করেন। এগুলো সবই ছিল হাসির।

সারা জীবন হাসির গল্প লিখেছেন মার্ক টোয়েইন। তার অনেক লেখাই ছিল ছোটদের জন্য। কিন্তু বড়রাও সেসব লেখা পড়ে মজা পেত এবং এখনও পায়। টোয়োইনের ছিলো ঘোরাঘুরির মারাত্মক নেশা। তিনি তার ভাইকে নিয়ে দেশের ভেতর ক্যালির্ফোনিয়া, সান ফ্রান্সিসকো ছাড়াও ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটেই তিনি পরবর্তীকালে ১৮৬৯ সালে লেখেন ‘দি ইনোসেন্স অ্যাব্রড’। তার সেরা লেখার মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’, ’অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকলবেরি ফিন’, ’দি প্রিন্স অ্যান্ড দি পপার’সহ আরো অনেক লেখা। রসাল-কৌতুককর লেখার জন্য আজও তিনি বেঁচে আছেন বিশ্বমানবের মনের মধ্যে। যদিও টোয়েইন আর্থিক আর বানিজ্য বিষযক ব্যাপারে বাধাগ্রস্থ ছিলেন, তা সত্বেও তার রম্য রসবোধ আর চপলবুদ্ধি ছিল তীক্ষন, এবং তিনি জনসমক্ষেও ছিলেন ভীষন জনপ্রিয়। তার সবচেয়ে জনপ্রিয সাহিত্য কর্ম হচ্ছে “অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টম সয্যার” এবং “অ্যাডভেঞ্চার্স অফ হাকলবেরি ফিন”। এই উপন্যাসদ্বয বিশ্ব সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা লাভ করেছে। টম সয়্যারের রোমাঞ্চকর কাহিনী টোয়েন তার নিজের শৈশবকাল থেকেই নিয়েছিলেন। মার্ক টোযেইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁর গল্প বলার এবং খুঁটিনাটিকে প্রাণবন্তভাবে তুলে ধরার অসাধারণ ক্ষমতা। উপরোক্ত দুটো বইতে তাঁর নিজের শৈশব ধরা পড়েছে বলেও তা হয়ে উঠেছে অত্যন্ত আন্তরিক।

মার্ক টোয়েইনের ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ টম সয়্যার’ সব সময় সকল মানুষের প্রিয় হবে থাকবে। খুবই মজার এবং রোমহর্ষক একটি বই। বইয়ের একটি চরিত্র টম। তাঁর বাল্য জীবনের বন্ধু ছিল টম ব্ল্যাংকেনশিপ। 

দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়্যার (১৮৭৬), দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন (১৮৮৫)—তাঁর এই দুই বইয়ের খ্যাতি দুনিয়াজুড়ে। 

মার্কিন গ্রন্থকার উইলিয়াম ফকনার টোয়েনকে ‘আমেরিকান সাহিত্যের জনক’ উপাধি দেন; এও বলেন, ‘আমরা তাঁর উত্তরাধিকারী।’

টোয়েইন তার লেখালেখি থেকে প্রচুর অর্থ আয় করেছিলেন। কিন্তু সে অর্থের একটি বড় অংশ তিনি নতুন আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিতে, বিশেষ করে "পেইগ মুদ্রণসন্নিবেশকারী যন্ত্রের" ওপর বিনিয়োগ করার মাধ্যমে খুইয়েছিলেন। যন্ত্রটি ছিলো অতি নিপুণ প্রকৌশলের ফসল যার কাজ দর্শকদেরকে মুগ্ধ করতো, কিন্তু এটি ছিল ভঙ্গুরপ্রবণ।

মার্ক টোয়েইনের জন্ম হয়েছিল যে বছর, সেবার পৃথিবীর আকাশে আবির্ভাব হয়েছিল হ্যালির ধূমকেতুর। ১৯০৯ সালে কোনো এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুর সঙ্গে এসেছি।’ সে আসে ৭৫ বছর পর পর। গত ১৯১০ সালে সে আবার এসেছিলো এই পৃথিবীর আকাশে।

টোয়েন বলতেন, “আমি তার সঙ্গে এসেছি তার সঙ্গেই চলে যেতে চাই। যদি যেতে না পারি, তবে সেটা হবে খুবই কষ্টকর।” ‘মার্ক টোয়েন আর হ্যালির ধূমকেতু হলো ব্যাখ্যাতীত বিস্ময়। ওরা একসঙ্গে এসেছে, তাই ওদের যেতেও হবে একই সঙ্গে!’

২১ এপ্রিল ১৯১০! যখন পৃথিবীর আকাশে আরেকবার দেখা গেল হ্যালির ধূমকেতু। কাকতালীয় ভাবে সেদিনই, হার্ট অ্যাটাকে চিরনিদ্রায় শুয়ে পড়লেন মার্ক টোয়েন। সত্যিই মার্ক টোয়েন আর হ্যালির ধূমকেতু যেন ব্যাখ্যাতীত বিস্ময়। ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন মার্ক টোয়েইন। নিউইয়র্কের “ওল্ড ব্রীক” প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চে টোয়েইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউইয়র্ক শহরের এলমিরায় তাঁদের পারিবারিক “উডলন সমাধি”তে তাকে সমাহিত করা হয়। 

মার্ক টোয়েইন অজস্র মানুষকে বুদ্ধিদীপ্ত আনন্দ দান করে গেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকর্ম অনাগত অসংখ্য মানুষকেও ভবিষ্যতে আনন্দ দান করে যেতে থাকবে। তিনি আমেরিকান রম্য করতেন, কিন্তু ইংরেজরা সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষজনও তাঁর নিজ দেশের মানুষের মতই তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি আমেরিকান সাহিত্যের একটি চিরস্থায়ী অংশ।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি