ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আইসিসি ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়

লতিফুর রহমান: নৈতিক ও দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীর উদাহরণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪৯, ২৮ অক্টোবর ২০২০

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, আইসিসি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠালগ্নের সদস্য ছিলেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় শেষদিন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি দুই দফায় ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্যারিস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন। আইসিসি বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে তাঁর সহযোগিতা, অবদান, পরামর্শ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয় থাকবে।

ট্রান্সকম গ্রুপ, যা পারিবারিক চা বাগানকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত হয়েছিল, প্রায় ৪৭ বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল এবং বৈচিত্রময় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। লতিফুর রহমান ১৯৬৬ সালে তাঁর পারিবারিক মালিকানাধীন ডব্লিউ রহমান জুট মিলস-এ প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এর নির্বাহী ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগে দক্ষতা ছড়িয়েছেন। তিনি তাঁর ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান বৈচিত্রময় করেছেন। 

লতিফুর রহমান কর্পোরেট সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ১৯৮০র দশকে এসকায়েফ এবং ফিলিপস -এ দুটি বড় বহুজাতিক কোম্পানীর বাংলাদেশে পরিচালনার দায়িত্ব পান এবং তিনি পুরাতন পরিচালনা পর্ষদ অক্ষত রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন- পেশাদার ম্যানেজমেন্ট যা করতে পারে বা করার কথা তা-ই করা উচিত।

বর্তমানে ট্রান্সকমের ঔষধ, খাবার, লাইটিং, ইলেকট্রনিকস ও মিডিয়াসহ ১৬টি অপারেশনাল সত্ত্বা রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পিৎজা হাট, কেএফসি, পেপসিকো এবং ফিলিপস-এর স্থানীয় ব্যবসায়িক অংশীদার। ট্রান্সকমের মোট লোকবল ১৭ হাজার এবং গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার ৮০ হাজার কোটি টাকা।

যদিও কোভিড-১৯ এর কারণে ট্রান্সকম গ্রুপের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে এ কারণে গ্রুপ থেকে কোনও কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়নি। কারণ, গ্রুপটি বিশ্বাস করে- সমস্ত কর্মচারীই বড় পরিবারের একটা অংশ।

সততা ও বিশুদ্ধতার জন্য লতিফুর রহমানের খ্যাতি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এবং ব্যবসায়ের সর্বোচ্চ নৈতিক মান ধরে রাখার জন্য সার্বজনীনভাবে তাঁকে সম্মান করা হতো। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রায় যারা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে লতিফুর রহমান ছিলেন অন্যতম। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, উচ্চ নৈতিক মান বজায় রেখেও ব্যবসা করে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

লতিফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ট্রান্সকম বিতরণ সংস্থা লিমিটেডের এমডি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সীমিন রহমান বলেন, তাঁর বাবা ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মানুষ। ”যখন প্রথম আমরা কাজে যোগদান করি, তখন তিনি আমাদের খুব ষ্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন যে- আমরা চেয়ারম্যানের সন্তান হওয়ায় কারণে কোনও বাড়তি সুবিধা প্রতিষ্ঠান থেকে পাব না; আমরা বেতনভূক্ত থাকব এবং সবার জন্য প্রতিষ্ঠানের যে বিধি-বিধান আছে আমাদের জন্যও তা-ই প্রযোজ্য হবে। কেবলমাত্র তখনই আমরা পুরষ্কৃত হব যদি তা পাওয়ার যোগ্য হই।

তিনি বিশ্বাস করতেন এবং আদর্শে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন যে- গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্র প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকা দুটোর সৃষ্টি হয়। দুটো পত্রিকাই সার্বিকভাবে দেশের সর্বাধিক স্বতন্ত্র সংবাদপত্র হিসাবে স্বীকৃত। তিনি নীতি, আদর্শ এবং বিশুদ্ধতায় আপোষহীন ছিলেন, এমনকি তাঁর নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেও। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজী ও বাংলা দৈনিকের মালিক হওয়ার কারণে বহুবার হয়রানির শিকার হন; কিন্তু তিনি পত্রিকার সম্পাদকদের কখনও কোনও প্রকার চাপ দেননি।

দেশের অন্যান্য শিল্পপতিদের মতন লতিফুর রহমানও বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত শিল্পের শ্রমিক ইউনিয়ন থাকা উচিত। তিনি মনে করতেন যে- প্রতিটি শিল্পের একটি নির্বাচিত কালেক্টিভ দর কষাকষি সমিতি থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

নৈতিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের জন্য তিনি ২০১২ সালে অসলো বিজনেস ফর পিস ফাউন্ডেশন দ্বারা ”অসলো বিজনেস ফর পিস” এওয়ার্ড পান। তিনি ২০০১ সালে আমেরিকান চেম্বার কর্তৃক বিজনেস এক্সিকিউটিভ এওয়ার্ড পান; ২০১২ সালে ডেইলি স্টার-ডিএইচএল কর্তৃক বিশেষ এওয়ার্ড পান; ২০১৭ সালে সার্ক আউটস্ট্যান্ডিং লিডার এওয়ার্ড এবং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি দ্বারা লাইফটাম অ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড লাভ করেন।

মি. রহমান বিশ্বাস করতেন যে, পরের দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশী সংস্থাগুলো কেবল দেশেই নয়, এর বাইরেও ভূমিকা পালন করবে। কেবলমাত্র আমাদেরকে একত্রিত হতে হবে এবং আমাদের পরিচালনার অনুশীলনগুলো ঠিকঠাক করতে হবে, এটা ছিল তাঁর দৃষ্টভঙ্গি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি