ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

লেখকদের স্মৃতিসম্ভারে আলো ছড়াচ্ছে লিটল ম্যাগ (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১৩:৪৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৫:২১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

লিটল ম্যাগাজিন। নামটি ছোট হলেও ব্যাপারখানা অতি বৃহৎ। লেখকের স্বপ্ন ও সংগ্রাম উঠে আসা সাহিত্যের এই ধারাটি কিছুটা ম্লান হলেও একেবারে লুপ্ত নয়। দরকার চিন্তকদের জেগে ওঠা।

চুল্লির মাটি কিংবা শ্মশান-কবরস্থানে সর্বহারার ঘাঁটি সব জায়গায়-সবখানে, জীবন সর্বস্বতায় উঠে আসে লিটল ম্যাগের লেখা। 

নিভৃত জীবনের অব্যক্ত কথা এর আগেও সম্ভবত এতোটা আবেগ নিয়ে আর কোনো বাণীবিন্যাস বা ফর্মে প্রতিফলিত হয়নি। সামাজিক মানুষের কথা যেখানে নিষ্ক্রিয়, সেখান থেকে সক্রিয় চলা-বলার শুরু লিটল ম্যাগাজিনের। যুগে যুগে তাই প্রকাশনার জগতে এই ধারা যেমন সৃজনশীল তেমনি নির্ভরতারও প্রতীক। 

কে লিখেছে? কেমন লিখেছে? আর সে ভাষার বৈশিষ্ট্যই বা কী? স্বকীয়তার সঙ্গে মৌলিকতা যুক্ত হয়ে যে রসের আস্বাদন তা কখনো সংগ্রাম সুধায় আশা জাগায়, কখনো ছাপিয়ে যায় প্রেম ভালোবাসার আখ্যান।

সাদামাটাভাবে নবীন লিখিয়েরাই উঠে আসে লিটল ম্যাগের পাতায়। কিন্তু হালআমলে অনেক সাহিত্যিক অভিব্যক্তি ছড়ান এই ফর্মে। চলমান সমাজের জীবনগাঁথা যেখানে এক হয়ে ধরা দেয় বহমান স্রোতে।

এই যাত্রায় এক সময় প্রথা ভেঙ্গেছিল ‘সবুজ পত্র’ কিংবা বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা পত্রিকা’। নতুনের আবাহনে এসেছিল ‘কালি ও কলম’, ‘শিখা’ কিংবা ‘শনিবারের চিঠি’। কল্লোল যুগের লিটল ম্যাগের সমাচার এখনও বোদ্ধা লেখকদের স্মৃতিসম্ভারে আলো ছড়াচ্ছে। এমনকি সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদের ‘কন্ঠস্বর’ নতুন নতুন লেখক ও কবি তৈরিতে অগ্রণী হয়েছে।

কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, “কল্লোল যুগের কথা আমরা শুনি। কল্লোল যুগ অনেক লেখক তৈরি করেছে। এখন আছে মুহিত কামালের ‘শব্দ ভার’, বেঙ্গল থেকে বের হয় ‘কালি ও কলম’। এর বাইরেও লিটল ম্যাগাজিন প্রচুর বের হয়। কিন্তু একটা জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা দরকার।”

কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “একজন লেখক লিখলেই তো লেখাটা শেষ হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত পাঠক সেটা না পড়ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ওই লেখার কোন গুরুত্ব নেই। আজকাল মানুষজন পড়ছে কম, এটা দুঃখজনক। আমরা যদি পাঠক তৈরি করতে পারি, সবাই যদি পড়ে- সেটা ভাল হবে।”

মন জোগাতে না-কি মন জাগাতে লিটল ম্যাগের দায়বদ্ধতা তা নিয়ে বহুদিনে দেন-দরবার বহুবার। সমালোচনার সেই খাড়াই-উতরাই ডিঙিয়ে মোটাদাগের এখনো লিটল ম্যাগ জীবনকে তুলে ধরেছে বৈচিত্র্যময় চিন্তাকে। কেউ কেউ বলেই ফেলেন কাঁচা মরিচের ঝাল বেশি। লিটল ম্যাগ আসলেই কি তাই? নইলে রবীন্দ্রযুগেও রবীন্দ্রবিরোধিতা চলে কিভাবে? কারণ লিটল ম্যাগের মলাটে আছে প্রথা ভাঙার যুক্তি ও দহন।

আনিসুল হক বলেন, “সাহিত্য পত্রিকার কাজ তো দৈনিকে হয় না। যেমন ধরেন নিউইয়র্ক টাইমস, ওদের কোন সাহিত্য পাতা নেই, যেটা আছে বইয়ের রিভ্যু।”

কবি ও লেখক শান্তা মারিয়া বলেন, “৯০ দশকে সাহিত্যের ছোট কাগজের বিকাশ বা উত্থান দেখেছিলাম এখন কিন্তু ওরকম দেখছি না। এখন যেন সবকিছু ফেসবুক কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।”

এক সময় পাড়া-মহল্লায় বেরুতো লিটল ম্যাগ। একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান মার্চ কিংবা ডিসেম্বরে চেতনার আকর জোগাতে প্রকাশ হতো লিটল ম্যাগ, হাতে লেখা দেয়াল পত্রিকা। সম্প্রতি ভাটা পড়েছে এমন আয়োজনের। তারপরও যা আছে তার সাহিত্যমূল্য সময়ের দাবিতে বহুগুণ বেশি। যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে তাঁদেরও ঘাটতি আছে।  

আনিসুল হক বলেন, “লিটল ম্যাগাজিনের কাছে একটা জাতীয় সাহিত্য পত্রিকার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন, এটা হয় না। আমাদের দেশে সাহিত্য পত্রিকার কোন অনলাইনও তো করলাম না। অনলাইনেও যদি একটা সাহিত্য পত্রিকা যেটা ঘরে ঘরে সবাই নাম জানে, সেটা হতো তাহলেও কিন্তু অনেক লাভ হত।”

সাহিত্যচর্চায় গতি আনতে লিটল ম্যাগের সুদিন ফেরানোর পরামর্শ সৃজনশীল লেখকদের। সম্পাদনা ছাড়া ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহিত্যকর্ম প্রকাশ করার বিপক্ষেও তাঁরা। 

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমি যা খুশি লিখলাম সেটা একজনকে পড়তে বাধ্য করলাম, এটা ঠিক না। কোন একটা ফিল্টার থাকা উচিত।”

শান্তা মারিয়া বলেন, “মানসম্পন্ন নয় এমন লেখাও ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে এবং তার বন্ধুরা বা তার অনুসারীরা হয়তো বলছেন খুব সুন্দর।”

জনপ্রিয়তার পালঙ্ক হয়তো তাঁদের ছোঁয় না। নগদ মূল্যে বড় বাজারে তারা কখনো বিকোয় না। তারপরও বলতে হয়, সাহিত্যের আকর খুঁজতে উৎসুক পাঠক একসময় জেগে উঠবে লিটল ম্যাগের রেনেশাঁ বা পুনর্জাগরণে। 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি