ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ জুন ২০২৫

শেখ মুজিব-হাসিনা ও ডামি নির্বাচন নিয়ে আদালতে যা বললেন সাবেক সিইসি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১৩, ২৬ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১৭, ২৬ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী ১ হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হলে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে আউয়াল বলেন, আমার জীবনে কখনোই কেউ অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবে না। আমি স্বীকার করি ডামি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কেন? একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, যারা অফিসার তাদেরকে আপনি প্রভাবিত করেছেন। বা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এটা কি আপনি মনে করেন?

আউয়াল বলেন, না আমি মনে করি না।

বিচারক তখন বলেন, কেন মনে করবেন না। আগের সময়ের তুলনায় হুট করে ইনকুয়ারি কমিটির পারিশ্রমিক এত বাড়ানো হলো কেন?

আউয়াল বলেন, কেউ দেখাতে পারবে না সিইসি নিজে ফিল্ড অফিসারদের টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বিচারক প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা বেশি ছিল। তা খর্ব হলো কেন?

উত্তরে আউয়াল বলেন, আমি গভীরভাবে আমার কাজ করেছি। আমার অধীনে ৮ লাখ লোক ছিল।

উল্টো প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, ডামি নির্বাচন কি আমার কারণেই হয়েছে?

বিচারক বলেন, কিন্তু আপনি তো পুরোটার প্রধান ছিলেন। অনিয়ম হলে তা জানিয়ে রিজাইন কেন দিলেন না?

উত্তরে আউয়াল বলেন, তা আমার পক্ষে সম্ভব না।

বিচারক বলেন, কেন?

আউয়াল বলেন, ৭২ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবের মতো নেতা কারচুপি করেছিলেন। কেন? ক্ষমতার লোভ।

বিচারক বলেন, কিন্তু আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা বেশি ছিল। আপনি রিজাইন দিলে সবার কাছে একটা ম্যাসেজ যেত।

আউয়াল বলেন, আমি সেটা পারতাম না। দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব গুলোই ছিল বিতর্কিত।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, এখন আর জাস্টিফাই করার সুযোগ নেই।

আউয়াল তখন বলেন, তাহলে একটা রিভলবার দিয়ে মেরে ফেলেন। নির্বাচনে আমরা লজিস্টিক সাপ্লাই করি। কোনো অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নিই।

রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, এখানে সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনি সবাইকে দোষারোপ করছেন। আপনি বলেন, তখন আপনি কী করেছেন?

এর আগে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, এই আসামি (হাবিবুল আউয়াল) ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এদেশে কলঙ্কজনক একটি নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আ.লীগ ও ২/১টি দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। সেই নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন, একতরফা, লোক দেখানো ও প্রহসনের নির্বাচন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে পারেননি। তখন তিনি (আউয়াল) বলেছেন, ‘কেউ নির্বাচনে না এলে আমি কি বসে থাকব?’ তিনি ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান। অন্যায় করেছেন বলেই তিনি গা ঢাকা দেন। 

শুনানিতে ওমর ফারুক আরও বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সারা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে’। এত বড় মিথ্যা বলে তিনি কীভাবে তার ফ্যামিলির সামনে মুখ দেখান? ওইদিন সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। তার এক ঘণ্টা পর ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। অথচ আমরা দেখেছি কেন্দ্রগুলোতে কোনো মানুষ ছিল না। কুকুর-বিড়াল কেন্দ্রে শুয়ে আছে। ওই এক ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।’ কতটা হাস্যকর কথাবার্তা।

শুনানিতে সরকারি এই কৌঁসুলি আরও বলেন, আসামির বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে থোক বরাদ্দ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। সংবিধান বহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি। 

আসামি পক্ষের আইনজীবী এমিল হাসান রুমেল তার রিমান্ড নামঞ্জুর চেয়ে বলেন, তার বয়স ৭০। তিনি অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। 

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। 

উল্লেখ্য, এর আগে রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। 
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি