ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৩৫, ১৭ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ২০:১৫, ১৮ আগস্ট ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশ শত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যে আরও বহুদিন, বহুযুগ ধরে অব্যাহত থাকবে সে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি যে কোনোদিনও কোনো অপশক্তির কাছে হার মানবে না সে বিশ্বাস নিয়েই আমরা বেড়ে উঠেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও উঠছে। এই বিপুল বিশ্বাস ও শক্তিই বাংলাদেশের প্রাণ সঞ্জীবনী সুধা। বাংলাদেশর বেড়ে ওঠার ইতিহাস অনেক গভীরে মিশে আছে। এদেশের, এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে লড়ে গেছে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে, কখনো জয় এসেছে, কখনো কাঙ্খিত জয় আসতে বিলম্ব সইতে হয়েছে। তবু বাংলাদেশ তার সর্বশক্তি দিয়ে সাধ্যমত লড়াইটা জারি রেখেছে। এজন্যই এই মাটির প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

একটি কথা খুব গভীর সত্য যে, এই বাংলাদেশ, এই বাঙলার মানুষ যে দীর্ঘদিন ক্লান্তিহীনভাবে লড়ে গেছে দুর্বত্তদের বিরুদ্ধে এর পেছনে, অলক্ষে পরম এক শক্তি কাজ করেছে। শক্তিমান সব মানুষ বিভিন্ন সময়ে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কখনো সামনে থেকে কখনো সবার অলক্ষে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সফল স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মুক্তির আকাঙ্খাকে ধারণ করে সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। বঙ্গবন্ধু হলেন সেই অবিসাংবাদিত নেতা যার নেতৃত্বগুণ সারা পৃথিবীর বিষ্ময় সৃষ্টি করেছে। তার জাদুকরি নেতৃত্ব যেমন দ্রুত আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে তরান্বিত করতে ভূমিকা রেখেছে। ঠিক তেমনি তিনি বেঁচে থাকলে এই দেশ আরও দ্রুত এগিয়ে যেত কথিত অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম যাদের পছন্দ হয়নি তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মত ঘৃণ্য কাজে মেতে ওঠে। একথা সত্য যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পরেছিল বেশ লম্বা সময়ের জন্য।

এসময় সামরিক শাসকরা দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ের চেতনাকে ভুলে গিয়ে দেশকে গতানুগতিক ধারায় পেছনের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। এরপর দীর্ঘ সময় সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। যে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলেন, দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন সপরিবারে সেই বঙ্গবন্ধুর নাম এদেশে উচ্চারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। পদে পদে নির্যাতিত হতে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করা মানুষদের। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের মানুষের কঠিন নিদানের দিনে দেশে ফিরে শপথ নেন দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য। নিজের পরিবারের করুণ ও নির্মম পরিণতি নিয়ে তিনি ব্যথিত থাকলেও ভড়কে যাননি। বরং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ই সেদিন তার কাছে মূখ্য বিষয় ছিল।

বঙ্গবন্ধু কন্যার এই দৃঢ়চেতা মূর্তি সেদিন এদেশের দুর্ভাগ্যপীড়িত মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্জার করেছিল। এভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণমানুষের নেতৃত্বের কেন্দ্রে চলে এলেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার কর্মসুচি হাতে নেয়।

এ সময় দেশের দারিদ্র পীড়িত মানুষের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্যের সংস্থান হয়, কৃষির ভিত্তি মজবুত থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদনে বাংলাদেশ উদীয়মান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। মাঝখানে বিএনপি-জামায়াত ও সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার এসে এদেশের মানুষের স্বপ্নকে ফের লুন্ঠন করতে শুরু করলে এদেশের সাধারণ মানুষই ফের পথে নামে, গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে দেশ ও মানুষবিরোধী শক্তিকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এখন এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শেখ হাসিনার সরকার গত নয় বছরে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনসহ প্রায় সব খাতেই অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। একবারে ছোটখাট বিষয় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় যেমন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক পর্যন্ত সবকিছুই ব্যক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে রাখতে হয়।

অর্থাৎ তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বৃদ্ধিমত্তার ওপরে অনেকখানি নির্ভর করে সরকারের সুনাম ও জনপ্রিয়তা। দেশের কোথাও অনিয়ম ও অন্যায় হলে সরাসরি তাকেই সেখানে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হয়। সবাই তাকিয়ে থাকেন দেখেন প্রধানমন্ত্রী কী করেন, কী সিদ্ধান্ত দেন। সম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা আন্দোলনের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সক্রিয় হতে হয়েছে।

শেখ হাসিনাই নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশে রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। শেষপর্যন্ত সফল হয়েছেন এবং আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য নিরলস লড়ে চলেছেন। বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। নারীদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে তিনি অসামান্য ভূমিকা রাখেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়োগ দেন তিনি, বিচারপতি থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের পদে নিয়ে আসেন নারীদের। বাংলাদেশে এখন সংসদ নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। বর্তমান সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৭০ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। যা মোট সদস্যদের শতকরা ২০ ভাগ। ২০২০ সাল নাগাদ সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সংবিধানে। নারীর এই ক্ষমতায়নকে জাতীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় সরকার লেভেলে একজন নির্বাচিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহে ৩৩ শতাংশ আসন রাখা হয়েছে নারীর জন্য।


মাধ্যমিক থেকে অনার্স পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রকার মেধাবৃত্তি প্রদান করছে শেখ হাসিনার সরকার। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে মিড ডে মিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সব উদ্যোগের ফলে বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক ৬০ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। চালু করা হয়েছে, ‘মেটার্নাল হেলথ ভাউচার স্কিম।’ নারী উন্নয়ন ও উদ্যোগে পৃথিবীকে পথ দেখানোর জন্য শেখ হাসিনা পেয়েছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ এবং সমগ্র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা এবং নারী উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ড প্রসারে অভূতপূর্ব নেতৃত্ব প্রদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। এ সম্মেলনটিকে নারীদের বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন হিসেবে গণ্য করা হয়।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা প্রতিবছর নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত এবং সারা বিশ্বে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। সেখানে নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার এই সম্মান মূলত বাংলাদেশের সম্মান, শেখ হাসিনার এই দুর্বার এগিয়ে চলা মূলত বাংলাদেশের মানুষের এগিয়ে চলা। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাকে ধরে রাখতে হলে সত্যিকার অর্থেই শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সমর্থন দেওয়ার কোনো বিকল্প এখন পর্যন্ত নেই আমাদের।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই।

এসএইচ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি