ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

শৈশব স্মৃতি

সরদার রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৯:৪৪, ৩১ আগস্ট ২০২০

অগ্রহায়ণ মাস। গ্রামের ছেলে, ফাইভ কী সিক্স এ পড়ি। উঠানে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। হালকা কুয়াশা মাখা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কাজ করছে জকু ‘দা আর তোতা’দা। নির্দেশক আমার মা।

সন্ধ্যা নাগাদ কাজ শেষ করে তারা অনেক ধানায় পানায় করে আমার মায়ের কাছ থেকে এক আঁড়ি ধান বরাদ্ধ নিল রাত্রে মোলা (মোয়া) খাবে বলে। তখন এই অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান আসতো এবং গরু দিয়ে ধান মাড়ায় হতো। শীত শীত ভাব। রাত্রিবেলায় গ্রামের পার্শ্ববর্তী হিন্দুবাড়ীতে ফরমায়েশ মাফিক বাট্টা মোলা বানানো হতো এবং গরম গরম খাওয়া হতো। সেই এক অসাধারণ জিনিষ। 

রাত ন' টা নাগাদ জকু দা তোতা দা তাদের প্লান মাফিক আমাকেসহ নিয়ে গেল দক্ষিণ মুরাদপুরের হিন্দুপাড়ায় কেশবের মায়ের বাড়িতে। তিনি আমাকে নাতী ডাকতেন এবং খুব স্নেহ করতেন, এ জন্য আমিও নানী ডাকতাম। তার বাট্টামোলা ছিল বিখ্যাত। সাথে নারকেল দিতে পারলে স্বাদ হতো ভীষণ। তো আমাকে নানী কেশবের মায়ের কাছে বসায়ে রেখে জকুদা আর তোতাদা গেছে ভুঁইয়া বাড়ী থেকে নারকেল (চুরি করে) আনতে। কেশবের মা মোলা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

হঠাৎ তাদের ঘরের চালের উপর বিকট আওয়াজ হওয়াতে নানীর স্বামী কে কে করে ঘর থেকে বের হয়ে তাদের ঘরের পাশের নারকেল গাছে টর্চ মেরে দেখার চেষ্টা করতেই গাছ থেকে ঝুপ করে একজন নেমে পাশে রক্ষিত বরই গাছের কাটা যুক্ত বিশাল শুকনো ঢাল দিয়ে তাকে চেপে ধরে। তিনি চোর ধরবেন কি, কাটার আঘাতে কাহিল। আমি তাকিয়ে দেখলাম এটা তোতা দা। এর পরক্ষনেই সে দে দৌঁড়। আমি বসে রইলাম আর তামাশা দেখছি। প্রায় দশ পনের মিনিট পর তারা দুজনেই খালি হাতে এসে হাজির। ব্যবহার একদম স্বাভাবিক। 

নারকেল পায়নি। তারা এসে শুনল, একটু আগে কেশবের মায়ের গাছ থেকে কে যেন নারকেল পাড়তে ছিল, একটা পেরে কিভাবে যেন হাত ফসকে গিয়ে ঘরের চালে পড়েছে। তারা তাই নাকি তাই নাকি বলে আবারো একপ্রস্ত চোর খুজে এলো, চোরতো লাপাত্তা। কি আর করা, তারা বললো ঠিক আছে আমরা যখন নারকেল আনতে পারলাম না, তখন এইটা দিয়ে মোলা হউক। এবং তাই হলো। নারকেলযুক্ত অসাধারণ গরম গরম বাট্টার মোলা তৎক্ষণাৎ খাওয়া এবং পরিবেশন করা হলো। 

পরে আসার পথে তারা বললো তোতাদা আগে থেকে জানতো কেশবের মায়ের গাছে নারকেল আছে, এবং তাদের গোপন প্লান ছিল ঐ গাছ থেকে নারকেল পড়বে। কিন্তু জকু দা পাড়া নারকেল ধরতে গিয়ে হাত ফসকে ফেলে দেয় এবং তাতেই এই বিপত্তি! 

তখন গ্রামাঞ্চলে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি ছিল এমনই। সেই আনন্দ, সেই ঐতিহ্য, সেই পরিবেশ এখন আর নেই।

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি