ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সক্রেটিসের পরিণতি দেখে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান অ্যারিস্টটল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৫৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

বিশ্বজয়ী বীর সম্রাট আলেকজান্ডার দুঃখ করে বলেছিলেন, জয় করবার জন্য পৃথিবীর আর কোনো দেশই বাকি রইল না। তার শিক্ষক মহাপন্ডিত অ্যারিস্টটল সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। জ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই তিনি যার পথপ্রদর্শক নন। তাঁর politics গ্রন্থ আধুনিক রাষ্ট্রনীতির সূচনা করেছে। তাঁর politics গ্রন্থের নাট্যতত্ব কাব্যতত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। আধুনিক জীবনবিজ্ঞানের তিনিই জনক। বহু দার্শনিক তত্ত্বের প্রবক্তা। তার চিন্তা জ্ঞান মনীষা প্রায় দুই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছিল।

শৈশবে গৃহেই পড়াশুনা করেন অ্যারিস্টটল। ১৭ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিয়ে গৃহত্যাগ করেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এথেন্সে এসে উপস্তিত হন। সেই সময় এথেন্স ছিল শিক্ষার কেন্দ্র। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গড়ে তুলেছেন নতুন অ্যাকাডেমি। সেখানে ভর্তি হলেন অ্যারিস্টটল। অল্প দিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন অ্যাকাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

শিক্ষাদান ছাড়াও নানান বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন অ্যারিস্টটল তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই তারঁ গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও অজ্ঞাত ছিল না। পুত্র অলেকজান্ডারের জন্ম সময়েই তাঁর শিক্ষা ভার অর্পণ করে অ্যারিস্টটলের উপর। তখন অ্যারিস্টটল আটাশ বছরের যুবক। আলেকজান্ডার যখন তেরো বছরের কিশোর রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে অ্যাস্টটল এসে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করলেন। শ্রেষ্ঠ গুরুর দিগ্বিজয়ী ছাত্র। বহু প্রাচীন ঐতিহাসিকের ধারণা অ্যারিস্টটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারের অদর্শ মনোবল লৌহকঠিন দুঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে একজনের ছিল সমগ্র প্রথিবীকে জয় করে তার উপর প্রভূত্ব করবার প্রবল ইচ্ছা। অন্য জনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন জগৎ আবিষ্কার করে মানুষের জন্য তাকে চালিত করার ইচ্ছা। অ্যারিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধা। শুধু পুত্রের কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেখানকার বহু মানুষ বন্দী জীবন যাপন করছিল। রাজা ফিলিপ অ্যারিস্টটলে ইচ্ছায় শত্রু সেনার হাত থেকে শুধু স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুললেন।

অ্যারিস্টটল একদিকে ছিলেন মহাজ্ঞানী, অন্যদিকে সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন, পিতার কাছে পেয়েছি আমার এই জীবন আর গুরুর কাছে শিক্ষালাভ করেছি কিভাবে এই জীবনকে সার্থক কারা যায় তার জ্ঞান। যখন অ্যারিস্টটল জীবন বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার কাজ করছিলেন, অ্যালেক তাঁর সাহায্যের জন্য বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন ধরনের মাছ, পাখি,জীবজন্তুদের জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠানো। দেশ বিদেশের যেখানেই কোন পুথি পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যেত, আলেকজান্ডার যে কোন মূল্যেই সেই পুথি পান্ডুলিপি সংগ্রত করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন। যখন আলেকজান্ডার এশিয়া জয়ের নেশায় সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন, অ্যারিস্টিটল ফিরে গেলেন। এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পীঠস্থান, এখানেই স্কুল স্থাপন করলেন অ্যারিস্টটল । তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর। স্কুলের নাম রাখা হল লাইসিয়াম। কারণ কাছেই ছিল গ্রীক দেবতা লাইসিয়ামের মন্দির ।

৩২৩ খ্রীষ্টপূর্বে আলেকজান্ডারের আকস্মিক মুত্যু হল। এতদিন বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় যে জীবন যাপন করতেন তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছে থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না অ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এই স্বেচ্ছানির্বাসের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি অ্যারিস্টিটলকে।

** লেখাটি মাইকেল এইচ হার্টের অ্যা র‌্যাংকিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসনস ইন হিস্টরি বই থেকে নেওয়া।

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি