সহিংস পরিবেশে সংস্কার টিকতে পারবে না: টিআই চেয়ারম্যান
প্রকাশিত : ২০:০৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের কর্মীদের হয়রানি ও হুমকি এবং সহিংস পরিবেশে বাংলাদেশে সংস্কার টিকতে পারবে না।’ এমন কথা বলেছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভালেরিয়াঁ।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের ওপর 'ক্রমবর্ধমান হামলা' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিকে পুষ্ট করার 'গোপনীয়তার সংস্কৃতি' ভাঙতে মুক্ত ও নিরাপদ সংবাদ পরিবেশন অত্যাবশ্যক।
ভালেরিয়াঁ বলেন, আগের সরকারের আমলে প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। এর ফলে সরকারি সেবায় দীর্ঘমেয়াদি ধ্বংস ডেকে এনেছে ও বৈষম্য বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, যদি এই অর্থ লুট না হতো, তাহলে দারিদ্র্য অনেক বেশি কার্যকরভাবে কমানো যেত।
সংস্কার কমিশনগুলোতে টিআইবির অংশগ্রহণকে সঠিক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে টিআইবিকে অবশ্যই ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে এবং একইসঙ্গে ক্ষমতার সমালোচনাও করতে হবে।
তিনি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রশংসা করে বলেন, তারা গত বছর 'স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার পতনে' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যা বৈশ্বিক স্বৈরতন্ত্র বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এক অনুপ্রেরণা।
ভালেরিঁয়াঁ বলেন, গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সংস্কারগুলোকে টেকসই করতে হবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে এর ওপর সুশীল সমাজের নজরদারি থাকতে হবে। তিনি জবাবদিহি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কোনো দেশই কখনও বলতে পারে না যে তাদের দুর্নীতির সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
তিনি বাংলাদেশকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারেরও পরামর্শ দেন।
টিআই চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তিনি 'সত্যিকারের অঙ্গীকার' পেয়েছেন যে, তারা এ পরিবর্তনকে সফল করতে চায়। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ-তিতিক্ষা 'অর্থহীন হতে পারে না'।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচারের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের জিডিপির অন্তত ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষতি হয়, যা বৈষম্য বাড়ায় ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। গত ১৫ বছরে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এর কিছু অর্থ বিদেশে জব্দ করা হয়েছে, তবে তা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, 'আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত অর্থপাচার প্রতিরোধ করা। কারণ, বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনার চেয়ে অর্থপাচার প্রতিরোধ করা অনেক সহজ ও কার্যকর।'
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিংখাতে কিছু সংস্কার বড় আকারের অর্থপাচারের সুযোগ কমিয়েছে। তবে বাণিজ্য মূল্য নিয়ে কারসাজি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি স্পষ্ট করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে যে কমিশন হয়েছিল, সেখানে তার অংশগ্রহণ ছিল পুরোপুরি স্বাধীন এবং টিআইবিই এর অর্থায়ন করেছে, সরকার নয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দুদকের কার্যকর স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
এসএস//
আরও পড়ুন