ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সার্জারির ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এর ভূমিকা

ডা. মো. মিজানুর রহমান রাজু

প্রকাশিত : ১৬:৪১, ২৮ মার্চ ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

অনেকে ভুল ধারণা করেন যে, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট শুধুমাত্র সার্জারির সময় অপারেটিং রুমে থাকেন, কিন্তু সার্জারির পূর্বেও অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রি-অপারেটিভ চেকআপ এর ক্ষেত্রে।

প্রি-অপারেটিভ চেকআপ বা প্রি-অ্যানেস্থেটিক চেকআপ এর উদ্দেশ্য হল চিকিৎসক ও রোগীর ঝুঁকির কারণগুলো সনাক্ত করা, যা অ্যানেস্থেসিয়ার সুরক্ষাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস শুনেন, শারিরীক পরীক্ষা করেন এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলোর রিপোর্টগুলো দেখেন। তারপর অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেন। প্রি-অ্যানেস্থেটিক চেকআপ এর একটি সুবিধা হল, এতে রোগীর সাথে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এর সরাসরি সাক্ষাৎ হয়, সার্জারি পরবর্তীতে সফলতা কেমন হতে পারে, সুবিধা অসুবিধা, কোন জটিলতা হতে পারে কি না এবং কি কি ঝুঁকি হতে পারে সে বিষয়ে রোগী সরাসরি কথা বলতে পারে। 
অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশের বিষয়ে রোগীদের জন্য প্রি-অ্যানেস্থেসিয়া চেকআপ কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

প্রি-অ্যানেস্থেটিক  চেকআপ অ্যানেস্থেসিওলজিস্টকে রোগীর কোমোর্বিডিটি যেমন হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হার্টের রোগ এবং রোগী যে ওষুধ গ্রহণ করছে তা পর্যালোচনা করতে সহায়তা করে। এরকম ঝুঁকির কারণ যদি রোগী প্রকাশ না করে, লুকিয়ে রাখে; সে ক্ষেত্রে অপারেশন টেবিলে মারাত্মক জটিলতা, এমনকি দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

এই পর্যায়ে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, অ্যানেস্থেশিয়ার পদ্ধতির পাশাপাশি অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত অ্যানেস্থেটিক ঔষধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি, রোগীর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি (নাড়ি, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার, রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন) পর্যবেক্ষণ করেন এবং অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে স্থিতিশীল রাখতে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য সংশোধন করেন।

বড় হাসপাতালে, অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের সর্বাধিক সহায়তা পান। তবে যেসব এলাকায় ঘাটতি রয়েছে সেখানে এই মনিটরিং কাজটি ম্যানুয়ালি করেন। যার ফলে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে নিরাপদ রাখতে এবং সার্জনকে শান্ত রাখতে অনেক চাপের মধ্যে থাকে।

অ্যানেস্থেসিয়া-পরবর্তী কেয়ার ইউনিট বা "পোষ্ট-অপারেটিভ রূম" এ অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোগী অস্ত্রোপচারের পরে অনেক সময় অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাব কিছুটা থেকে যায়। এই মুহূর্তে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টকে রোগীর কার্যকলাপের স্তর, পালস, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস সঞ্চালন, সতর্কতা এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন পর্যবেক্ষণ করতে হবে; মেরুদণ্ডের এনেস্থেশিয়ার পরে পায়ের নাড়াচড়া এবং সংবেদন ফিরে এসেছে কি না পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পোষ্ট-অপারেটিভ কক্ষটি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রায়শই জটিলতা দেখা দেয়, তাই অপ্রয়োজনীয় ত্রুটিগুলি এড়াতে রোগীদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে সৃষ্ট জটিলতাগুলি সনাক্তকরণ এবং তাত্ক্ষণিকভাবে পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের। 

এছাড়াও, অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট শুধুমাত্র অস্ত্রোপচারের পরে ব্যথা ব্যবস্থাপনা ইউনিটে অংশগ্রহণ করেন না বরং অন্যান্য কারণের ব্যথা যেমন ক্যান্সারের ব্যাথা, পোড়া ব্যথা, নিউরালজিয়া, পিঠে ব্যথা এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিউরোপ্যাথির চিকিৎসাও সরাসরি অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই সাথে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টগন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আই. সি. ইউ. তে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

তাই অ্যানেস্থেসিয়া নিয়ে ভয়ের কিছু নাই। প্রতিদিন আমাদের দেশে হাজার হাজার অপারেশন হচ্ছে নিরাপদ অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে। তাই সকলের উচিত সার্জারির পূর্বে অবশ্যই আপনার অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সম্পর্কে জানুন, চিনুন এবং তার সাথে কথা বলুন।

লেখক: ডা. মো. মিজানুর রহমান রাজু, সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিয়াক অ্যানেস্থেসিয়া ও কার্ডিয়াক আই.সি.ইউ,খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি