ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

সাহসই করোনা রোগীর বড় ওষুধ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৫, ২৮ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:০৮, ২৮ মে ২০২০

করোনা পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সবাইকেই কোন না কোন সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে। যেহেতু এখনও পর্যন্ত এই রোগের কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার হয়নি তাই সচেতনতা ও প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। আর যদি একবার কারও শরীরে এই ভাইরাস আক্রমণ করেই বসে তবে ভয় না পেয়ে তাকে জয় করতে হবে। অর্থাৎ মনে সাহস ধরে রাখতে হবে। এমনটাই বললেন চিকিৎসক ও করোনা জয়ী রোগীরা।

৩৯তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) নিয়োগ পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদায়ণ পাওয়া করোনা ভাইরাস জয়ী দুই চিকিৎসক জানান, করোনা ভাইরাসের এই সময়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি কারও শরীরে যদি ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায় তবে হাতাশ হওয়া যাবে না। ভয়কে জয় করার চেষ্টা থাকতে হবে। সাহসই এই রোগীর বড় অস্ত্র।

ওই দুই চিকিৎসকের একজন নারী। তিনি বলেন, আইসোলেশনে একা সময় কাটানো সহজ নয়। তারপরও সে সময় নিজের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন গরম পানি, গরম চা, আদা, লেবু পানি গ্রহণ করেছি। আর দিনে দুই থেকে তিনবার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ঠিক রাখতে শ্বাস–প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়ামও করেছি। এ গুলো ইউটিউব থেকে দেখেও করা যায়।

তিনি আরো বলেন, নিজেকে ভালো রাখার জন্য যা করা যায়, করেছি। পরিবারের সবাই আমাকে মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছে। বিশেষ করে আমার মা-বাবা, স্বামী, শ্বাশুড়ি অনেক সাহস যুগিয়েছেন। কোনো কারণে মন ভালো না থাকলে তাঁরা মুঠোফোনে সান্তনা দিতেন ও ভরসা দিতেন। আর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্যারসহ অন্যান্য সহকর্মীরাও সবসময় সাহস দিতেন।

তিনি জানান, অন্যান্য শারীরিক সমস্যা না থাকায় তিনি ভয় একটু কমই পেয়েছেন। নিজেকে বুঝিয়েছেন এই বলে যে, মনে জোর রাখতে হবে।

অসুস্থ থাকার সময়ের বর্ণনা করে তিনি বলেন, আইসোলেশনের প্রথম দিনে সন্ধ্যায় আমার খুব খারাপ লাগছিল। প্রচন্ড মাথাব্যথাও শুরু হয়। পরে আমি চা ও ভাত খেয়ে ওষুধ নিলাম। ভাবলাম, আমি দুশ্চিন্তা করছি। এ জন্যই হয়তো মাথা ব্যাথা করছে। দুশ্চিন্তাটা কমাতে হবে। যখন এই বোধটা আসল, রাতের মধ্যেই মাথাব্যথা কমে গেল। রাতে একটা ভালো ঘুমও হয়। নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে দুশ্চিন্তা কমাতে হবে।

আক্রান্ত পুরুষ চিকিৎসক বলেন, গত ৩ মে তাঁর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। এখন সুস্থ আছেন। আইসোলশেন শেষ করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।

তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিনের দিনগুলো অনেক কষ্টের ছিল। দোতলার বাসার ওপর তলায় একটি কক্ষে নিজেকে পৃথক রেখেছিলাম।বন্দী জীবন কাটিয়েছি। নিচ তলায় বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ভাই আছে। খারাপ লাগা ছিল অনেক বেশি।

তিনি বলেন, আমার কাশি ছিল। ভয় ছিল শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় কিনা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে কিনা। আর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ভয়, উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার প্রতিবেদন নেগেটিভ এসেছে।

ওই চিকিৎসক বলেন, ঊর্ধ্বতন স্যার ও পরিবারের সদস্যরা সব সময় পাশে ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছে। সরাসরি তো কথা হতো না। ভিডিও কলে বলত কোনো সমস্যা নেই। ৯০ শতাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তুমিও সুস্থ হয়ে যাবে এসব বলে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে চারপাশের মানুষ অনেক কিছু বলে। এসব এড়িয়ে চলতে হবে। মনোবল অটুট রাখতে হবে। এ সময় সবার সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি