ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ পাগলাটে হয়ে উঠল গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ!

প্রকাশিত : ১৫:৩৯, ২৯ মার্চ ২০১৯

অদ্ভুত রকমের একটা ‘পাগলাটে’ হিমবাহের দেখা মিলল গ্রিনল্যান্ডে! যে তার গত ২০ বছরের স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ একেবারেই বদলে ফেলেছে। গ্রিনল্যান্ডে আর কোনও হিমবাহ ছুটত না তার মতো গতিতে। আর সেই পাগলাটে হিমবাহের পায়েই এখন যেন কেউ শেকল পরিয়ে দিয়েছে! তার গতিবেগ খুব দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে। উষ্ণায়নের দৌলতে বিশ্বের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তনের ফলেই গ্রিনল্যান্ডের জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহের এই পাগলাটে আচার-আচরণ।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় বেরিয়েছে গবেষণাপত্রটি। মূল গবেষক পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) আলা খাজেন্দার।

গবেষকরা দেখেছেন, গত দু’দশক ধরে যে নিয়মে চলছিল, তা পুরোপুরি বদলে ফেলে জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহটি দ্রুত হারে পুরু হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, এত দিন হিমবাহটি এগিয়ে আসছিল মাটির (স্থলভাগ) দিকে। এবার সে উল্টো দিকে হাঁটা দিয়েছে। গড়িয়ে চলেছে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে। আর গলে যাচ্ছে বলে সেই হিমবাহটি উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে সাগর, মহাসাগরের পানিস্তরের উচ্চতা। সেই হিমবাহে যত না বরফ জমছে, তার চেয়ে অনেক বেশি তা গলে যাচ্ছে। তবে গত দু’বছরে অবশ্য সেই বরফ গলার হার কিছুটা কমেছে।

মূল গবেষক আলা খাজেন্দার জানিয়েছেন, হিমবাহটি থেকে ৬০০ মাইল (বা, ৯৬৬ কিলোমিটার) দূরে উত্তর অতলান্তিক মহাসাগরের পানি আচমকাই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর উত্তর আটলান্টিকের পানি এতটা ঠাণ্ডা হয়নি এর আগে। আর সেই ঘটনাটা ঘটেছে ২০১৬ সালে। তার ফলেই এমন পাগলাটে আচার-আচরণ জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহের।

গবেষকরা নাসার ‘ওশন্‌স মেল্টিং গ্রিনল্যান্ড’ (ওএমজি) মিশনের পাঠানো তথ্যাদি থেকেই জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহের গত দু’দশকের আচার-আচরণ বদলে যাওয়ার খবর পেয়েছেন।

খাজেন্দারের কথায়, এটা আমরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইনি। আমরা ভাবতেই পারিনি জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহের আচার-আচরণ গত ২০ বছরে এতটা বদলে যাবে। আমরা এও দেখেছি, ওই পাগলাটে হিমবাহের দক্ষিণ দিকে থাকা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পানি শুধু ২০১৬ সালেই অত ঠাণ্ডা হয়েছে, তা নয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮- পর পর তিন বছর ধরেই এই ঘটনা ঘটেছে।

ভারতের পুণের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশ্‌ন রিসার্চ (এনসিএওআর)-এর অধিকর্তা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হিমবাহ বিশেষজ্ঞ এম রবিচন্দ্রন বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পানি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে। তার পর আবার তা গরম হয়। এটা ঘটে প্রতি ৫ থেকে ২০ বছর অন্তর। মহাসাগরের পানির তাপমাত্রার এই পরিবর্তনকে বলা হয়, ‘নর্থ আটলান্টিক অসিলেশন’ (এনএও বা ‘নাও’)। কিন্তু উষ্ণায়নের দৌলতে দ্রুত হারে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আটলান্টিক মহাসাগরের পানির তাপমাত্রার রদবদলের সেই পরিচিত রুটিনে অনেকটাই রদবদল ঘটে গেছে। আর তার ফলেই  উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পানি অস্বাভাবিকভাবে ঠাণ্ডা হয়ে যায় ২০১৬-য়। কিন্তু হিমবাহটির এই পাগলাটে আচার, আচরণ বেশি দিন থাকবে না। তা আবার সমুদ্রের দিক থেকে সরে আসবে মাটির (স্থলভাগ) দিকে। আর তখন তার গতিবেগও বেড়ে যাবে অনেকটা। আবার সেই হিমবাহ পাতলা হয়ে যেতে শুরু করবে জলবায়ু পরিবর্তনের দৌলতে। তার বরফ গলতে শুরু করবে খুব দ্রুত হারে।

মূল গবেষক আলা খাজেন্দারের কথায়, আমাদেরও সেটাই ধারণা। তবে আমরা দেখেছি, ২০০০ সাল থেকেই স্থলভাগ ছেড়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহটি। বরফ গলতে গলতে সেটি সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় গতিও অনেকটাই কমে গেছে জ্যাকব্‌শভ্‌নের। তবে এভাবে যখন হিমবাহের উপরের বড় বড় বরফের চাঙরগুলো একের পর এক ভেঙে পড়তে শুরু করবে, তখন গায়েগতরে হালকা হয়ে পড়ায় জ্যাকব্‌শভ্‌ন হিমবাহের ছোটার গতি আবার বেড়ে যাবে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০০৩ থেকে ২০১৬, এই ১৪ বছরে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত হিমবাহটি প্রায় ৫০০ ফুট বা ১৫২ মিটার পাতলা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পর ২০১৬ থেকে তা একটু একটু করে পুরু হতে শুরু করেছে, তার যে দিকটা সমুদ্র লাগোয়া, সেই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পানি আচমকাই খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ায়।

খাজেন্দার অবশ্য এও বলেছেন, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ঠিক কোথায় সেই পানি হঠাৎই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, তা এখনও জানা যায়নি। সেই উৎসের খোঁজ মিললে মহাসাগরের পানি কেন সেখানে এতটা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, তার কারণটাও জানা যাবে।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি