ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে শার্শার ফসলের মাঠ

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:১০, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

যশোরের শার্শা উপজেলা জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। ফসলের মাঠের হলুদ রাজ্যে গুঞ্জনে মুখরিত মৌঁমাছির দল। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের অপরুপ দোলাচালে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।

এক সময় লাভ না হওয়া ও অব্যাহত লোকসান গুনতে থাকায় যশোরের শার্শায় সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন চাষিরা। এখন স্বপ্ন দেখছেন বাম্পার ফলনের। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিনামূল্যে পাওয়া উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা ফলনে কৃষকের প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, শার্শা উপজেলায় গত বছরে প্রায় ৪৮৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে
কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ বছর ৭,৮৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। 

গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার এ উপজেলার ৯০০ কৃষক এ সরিষা চাষ করেছেন। আগামীতে এ জাতের সরিষা চাষে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন বলে তাদের ধারণা। তবে শুধু ধান চাষ করলে হবে না। পাশাপাশি ভুট্রা, সরিষা, আলু, সূর্যমুখী ফুল, পাট, তিলসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষকের নিপুন হাতে প্রকৃতির বুকে গড়ে তোলা ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে
বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ার আশা কৃষকদের। 

ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলার বিভিন্ন সরিষাক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, মাঠে যেন কেউ সবুজের গায়ে হলুদের আল্পনা দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। মাঠের পর
মাঠ যেন হলুদের গালিচা। দিগন্ত জুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুলে ফুলে মৌঁমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌঁমাছির গুনগুনানিতে
মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে শার্শার শার্শা, বেনাপোল, পুটখালি, বাহাদুরপুর, নিজামপুর, ডিহি, লবণপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক পাঁচ থেকে ছয় বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন।

এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক হোসেন আলী জানান, প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ
হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। এর বাজারে চাহিদা ভালো থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায়। বর্তমান সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন
হবে। গত বছরের মতো লাভবান হতে পারবো।

বালুন্ডা গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, সরিষার চাহিদা ভালো থাকাতে এবং চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকাতে প্রতি মৌসুমে সরিষার চাষ করি। আশা করছি এবারও দাম ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বেনাপোলের নারায়ণপুর এলাকার কৃষক জাবির হোসেন বলেন, বারি-১৪ জাতের সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে। এ
জাতের সরিষা আবাদের পর একই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ
করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৪৫০০ জন কৃষককে সরিষা চাষে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার তিন বছর মেয়াদী একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। এতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যেন এ বছর ৭,৮৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা যায়।

আরও বলেন, বারি-১৪ সহ অন্যান্য জাতের সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে বোরো আবাদ করতে পারেন বলে কৃষকরা একে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করছেন। স্থানীয় বাজারে গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে মনে করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর সরিষার ভালো আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি