ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাজার কোটি টাকা খরচেও স্বচ্ছ পানি আসেনি বুড়িগঙ্গায় (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১১:৩০, ২১ মার্চ ২০২৪

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে এক যুগেরও বেশি সময় আগে যমুনা থেকে ঢাকায় পানি আনতে নেয়া হয়েছিল প্রকল্প। ১ হাজার ১শ’ ২৫ কোটি টাকার সেই প্রকল্প কাজের ইতি টানা হয়েছে কিন্তু পানি আর আসেনি। স্বচ্ছ পানি পায়নি বুড়িগঙ্গা। প্রকল্পের নামে জলের টাকা কোন জলে গেলো।

যমুনার পানি তো এলো না, দুষণে বুড়িগঙ্গার পানি আরও কালো হয়েছে। কম করে হলেও ৫০ হাজার টন বিষাক্ত কঠিন ও তরল বর্জ্য মিশছে প্রতিদিন। স্যুয়ারেজ, শিল্প বর্জে্যর লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়নি একটিও। দুষণে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে; ক্রমশ হচ্ছে ভরাট ও দখল। 

সরোজমিনে দেখতে যমুনা সেতু’র তিন কিলোমিটার ভাটিতে নতুন ধলেশ্বরীর উৎসমুখে একুশের সংবাদ দল। বাস্তবের খনন আর কাগজের হিসেবে যে যোজন-যোজন ফাঁরাক, যার স্বাক্ষী যমুনাপাড়ের মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখানে ড্রেজিংয়ে ত্রুটি রয়েছে, অব্যবস্থাপনা রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে সদিচ্ছারও ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে আমরা দেখি জলের টাকা জলেই যায়, পানি আর পৌঁছায়না ঢাকার বুড়িগঙ্গায়।

এখান হতে পানি নিউ ধলেশ্বরী, পুংলী, বংশাই, বংশী, তুরাগ হয়ে বুড়িগঙ্গায় ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু, ড্রেজিংয়ের নামে প্রকল্পের অব্যবস্থাপনায় নদীর অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।

বাংলাদেশ ওয়াটার ডেভলাপমেন্ট বোর্ডের ঢাকা ডাব্লিডি সার্কেল-১ প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক বলেন, “যতোখানি গভীরে এবং যতোখানি চওড়ায় আসার কথা ছিল দুইটা কোনোভাবেই সমন্বয় করা যাচ্ছেনা। যমুনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পলি রয়েছে।”

ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল নদী’র তীরে রেখে বর্ষায় ধুয়ে যাবার অজুহাতে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছে ঠিকাদাররা। স্থানীয়রা জানান, খনন করে যাওয়ার কিছুদিন পর পাড় ভেঙ্গে নদী ভরাট হয়ে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাজ না হওয়াতে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়।

এলেঙ্গায় এসে কথা হচ্ছিল কয়েকজন মৎসজীবির সাথে। ভরাট নদীর স্বল্প পানিতে না আছে মাছ, না আছে জলজ প্রাণি। কষ্টকর ঠেকেছে জীবন ধারণের যোগান দিতে। 

জেলেরা জানান, নৌকা মাথায় নিতে হয় এরকম অবস্থা হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় কিছু পানি আবার কিছু জায়গায় বালিতে পূর্ণ।

একসময়ে স্রোতস্বীনি পুংলী খননে হয়েছে শ্রীহীন। স্রোত নেই একেবারে, ফসলের চাষাবাদ বিরাণভূমিতে। 

রিভার এন্ড ডেল্টা রির্সাচ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ বলেন, “ঘটনা তদন্ত করলে কন্ট্রাক্টরের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে থাকি। কিন্তু এই প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ইন্সেপেক্টর, যারা এই প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করেছেন। তারা এক জায়গা থেকে ইজারা নেন কিন্তু কাটেন আরেক জায়গায়।”

রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ে প্রকল্প সমাপ্তি টেনে একই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় চালু করা হয়েছে।  বলা হচ্ছে, নদী ভরাট ঠেকাতে চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর গুনতে হবে কম করে হলেও ৭২ কোটি টাকা।

২০১০ সালের ৪ জুনে “বুড়িগঙ্গা রিভার রিস্টোরেশন” প্রকল্পের অনুমোদন পায়। পাঁচদফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালে সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েও কাজ শেষ হলো না। এখন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ঠিকাদার বাদ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডই খননে নেমেছে। 

নদীর পাশেই এরকম বালু ফেলা হলে সেটাতো বর্ষার পানিতে ধুয়ে নদীতে যাবেই। এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে নদী খননে সুফলটা কোথায়? জলের টাকা যে জলেই যাবে সেটা তো সবাই জানে। তারপরও কেনো এই লুকোচুরি খেলা। আর এটা যদি না থামায় তাহলে জনগণের টাকা, রাষ্ট্রীয় টাকার তো অপচয়ই হবে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি