ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

হেপাটাইটিস সি চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত : ১১:৪৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৩২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

 

পৃথীবি জুড়েই লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারন হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। পাশ্চাত্যে বেশিরভাগ লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনই করা হয়ে থাকে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস জনিত লিভার রোগের কারনে। অথচ ১৯৮৯ সালে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষের এই ভাইরাসটি সম্বন্ধে কোন ধারনাই ছিল না ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৭-২০ কোটি যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩%। আর এই সংখ্যাটি বিশ্বের এইডস রোগীর চেয়ে প্রায় ৪ গুন বেশী। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লক্ষ লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে পাশ্চাত্যে এবং বিশেষ করে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে হেপাটাইটিস সি -এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশী। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩০-৪০ লক্ষ লোক এই ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পূর্বে তা হেপাটাইটিস সি ভাইরাস মুক্ত কিনা সেটি যথাযথভাবে পরীক্ষা করা ও ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী হওয়ায় উন্নতবিশ্বে যখন হেপাটাইটিস সি’র সংক্রমন একদিকে কমে আসছে, তখন অন্যদিকে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস মূলত ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে। দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে অনেকেই নিজেদের অজান্তে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া একই শেভিং রেজার, ব্লেড কিংবা ক্ষুর ব্যবহারের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে অথবা গর্ভস্থ শিশুর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্বভাবনা খুবই কম। সামাজিক মেলামেশা যেমন হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি এবং রোগীর ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন গ্লাস, চশমা, তোয়ালে, জামা-কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় না।

শরীরে একবার হেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রবেশ করলে তা শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে লিভারে স্থায়ী ইনফেকশন তৈরী করে যাকে আমরা বলে থাকি ক্রনিক হেপাটাইটিস সি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অথচ ১০-১৫ বছরের মধ্যে এদের বেশীরভাগই লিভার সিরোসিসের মত মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হন, যাদের অনেকেরই পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সার দেখা দেয়। আর তাই হেপাটাইটিস সি-কে বলা হয়ে থাকে ”তুষের আগুন” - যা ভিতরে ভিতরে লিভারকে পুড়িয়ে ছাড়খার করে ফেললেও, বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না।
মহিলা এবং অল্প বয়স্কদের লিভারে হেপাটাইটিস সি তুলনামুলকভাবে কম ক্ষতি করে থাকে। অন্যদিকে যারা অ্যালকোহল সেবন করেন তারা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের লিভারে মারাত্বক রোগ সৃষ্টির আশংকা খুবই বেশী।

হেপাটাইটিস সি-কে অনেকে নীরব ঘাতকও বলে থাকেন, কারন এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ভ্যাকসিন নেই। তবে ইদানিং নতুন নতুন ওষুধ চলে আসায় চিকিৎসার মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময়যোগ্য। সত্যি বলতে কি সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি-কাশির ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন ঔষধ না থাকলেও, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। আরও সুখবর এই যে, এ রোগের অন্যতম নতুন যে ওষুধগুলো যেমন, সফুসবোভির, ভেলপাটাসভির, ডাকলাটাসভির আর লেডিপাসভির - এ সবই উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা এই ওষুধগুলো এখন এদেশেই তৈরী হচ্ছে। সত্যি বলতে কি আমেরিকায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের একটি ট্যাবলেটের দাম যেখানে ১০০০ ডলার সেখানে এদেশে তা পাওয়া যাচ্ছে অনেক অনেক কমে। প্রতিদিন পৃথিবীর নানা দেশের লোক এদেশে এসে হেপাটাইটিস সি’র ওষুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন আর এসব ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। হেপাটাইটিস সি’র চিকিৎসার অগ্রগতিতে আর এসব ওষূধকে বিশ্বব্যাপি সহজলভ্য করায় বাংলাদেশের সরকার আর আমাদের ওষুধ শিল্প তাই গর্ব করতেই পারে।

পাশাপাশি প্রত্যেক সচেতন ব্যাক্তির উচিত শরীরে হেপাটাইটিস সি-র জীবাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে জেনে নেয়া আর থাকলে দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। তেমনি হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীর উচিত লিভার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করার পাশাপাশি রক্ত দান, অঙ্গ ও কর্ণিয়া দান আর সেলুনে সেভ করা থেকে বিরত থাকা ।

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

 

 টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি