ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘নাজিবকে সমর্থন করিনি, তাই আমাকে শেষ করতে চেয়েছিল’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫০, ২০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৩:০১, ২০ মে ২০১৮

মালয়েশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সদ্য কারামুক্ত আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাককে সমর্থন না করায় তাকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হলে আমরা জিততাম। আমাকে জেলে যেতে হতো না। তিনি এও বলেন যে, মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটে তাঁর দল অন্তর্ভূক্ত হোক এটি মেনে নিতে পারে নি তাঁর পরিবার।

মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদ জয়ী হওয়ার পর কারামুক্ত হন আনোয়ার ইব্রাহিম। এরপর রাজধানী কুয়ালালামপুরে নিজ বাসভবনে তিনি ব্রিটিশ দৈনিক অবজারভারকে দেওয়ার একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে আনোয়ারকে কারাগারে রেখেছিল নাজিব রাজাকের সরকার। নির্বাচনে বিরোধী জোটের হয়ে লড়াই করে জয় পান ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনিই আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপরই ৭০ বছর বয়মস্ক আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

সাক্ষাৎকারে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জেলে রাখা হয়। তিনি সর্বদা গণতন্ত্রকে নতুনে আলোয় দেখেছেন। ‘আমি সব সময় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, উদার চিন্তার কথা বলেছি। কিন্তু আপনি যখন এর আস্বাদ নিতে যাবেন, একটা পার্থক্য চোখে পড়বে’-যোগ করেন আনোয়ার।

ছয় বছর নির্জন কারাবাসের পর ২০০৪ সালে মুক্তি পান আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সময়ে তিনি পরিবারেরও সাক্ষাৎ পাননি। মুক্ত হয়ে তিনি নিজের দল গঠন করেন। নাম দেন পিকেআর। ২০১৩ সালে নাজিব রাজাক নেতৃত্বাধীন বারিসান নাসিওনালের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে হেরে যান। কিন্তু জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে ছিলেন। আনোয়ার বলেন, ‘আমি কখনই তাঁকে (নাজিব রাজাক) সমর্থন করিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আমার অবস্থান দৃঢ় এবং এটা তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি আমাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন।’

বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠান নাজিব। সে কারণে ২০১৫ সালে আবারও কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। আনোয়ার বলেন, ‘২০১৩ সালের নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হলে আমরা জিততাম। আমাকে জেলে যেতে হতো না।’

 

একসময় যাঁর সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই মাহাথির মোহাম্মদই ১৯৯৮ সালে আনোয়ারকে প্রথমবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। তাই গত জানুয়ারিতে যখন মাহাথির কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান, আনোয়ার অত্যন্ত সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। এ ব্যাপারে আনোয়ার বলেন, এটা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল এবং মাহাথিরকে বলেছিলাম : আমি কেন আবারও আপনার সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাই। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেবো।

কিন্তু আনোয়ারের সন্তানরা মাহাথিরের সঙ্গে ঐক্যের পক্ষে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা ঐক্যে অংশ নিতে চাইছিল না। তারা কেঁদেছে। তারা বুঝতে পারছিল না, যে লোকটা আমাদের জীবন নরক করে দিয়েছে, তার সঙ্গে আমি কেন সাক্ষাৎ করব।

তারা আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করল এবং আমাকে বলল, মাহাথিরের সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি করা উচিত না। তারা বলল, তার কারণে আপনি ভুগেছেন, আমরা ভুগেছি।’

প্রসঙ্গত, আনোয়ারের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ নিজের যোগ্যতা রাজনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৮ সালে মাহাথিরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় আনোয়ার ইব্রাহিমের। মাহাথির মোহাম্মদের রাজনৈতিক সংস্কারের বিরোধিতা করেন আনোয়ার। এ কারণে আনোয়ারকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন মাহাথির।

এরপর আনোয়ারের জীবনে নেমে আসে মহাদুর্যোগ। ২০০৪ সাল পর‌্যন্ত তাকে কারাগারে রাখা হয়। এ সময় তাকে পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।  ২০০৪ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি পিকেআর নামে নতুন দল গঠন করেন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি