ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

যে কারণে তুরস্কে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করছে মার্কিনিরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২২, ৯ মে ২০১৮ | আপডেট: ১২:২৭, ৯ মে ২০১৮

মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র ন্যাটোভূক্ত দেশ তুরস্ক। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে সম্প্রতি ফিলিস্তিন ও সিরিয়া ইস্যুতে দেশ দুটোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দেওয়ায় তুরস্কে প্রায় ৭১৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি নিষিদ্ধে একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিলের আওতায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তুরস্কে সব ধরণের অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরি সরঞ্জাম রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ নেওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে-

দেশ দুটোর মধ্যে ভঙ্গুর সম্পর্ক:

সিরিয়া ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ফিলিস্তিনিদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান বারবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে স্থানান্তরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রচারণা চালান এরদোগান। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতির কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও দেশটির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

রাশিয়া-তুরস্ক সম্পর্কের নতুন মাত্রা:

ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ন্যাটোর বিরোধীতা করে আসা রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি তুরস্কের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এরইমধ্যে সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির মধ্যেই তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র কেনার একটি চুক্তি সই করে, যা মার্কিনিদের গাত্রদাহ হয়ে দেখা দেয়।

সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া-তুরস্ক-ইরানের মতৈক্য:

সিরিয়া ইস্যুতে বাসার আল আসাদকে টিকিয়ে রাখতে লড়ছে ইরান ও রাশিয়া। রাশিয়া প্রত্যক্ষভাবে লড়লেও ইরান তার সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মাধ্যমে দেশটিতে আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ মার্কিনিদের। এদিকে তুরস্ক প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও, দেশটি ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যায়। তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সমর্থনে ইতোমধ্যে আফরিন দখল করে নিয়েছে। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি ও তুর্কী বাহিনীর কাছে মার্কিন সেনারা দেশটিতে অনেকটাই ধরশায়ী হওয়ায় তুর্কীদের উপর বেজায় চটেছে মার্কিন মুল্লুক। ইতোমধ্যে দেশ তিনটি সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করতে সমর্থ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-কুর্দী সম্পর্ক:

কুর্দী যোদ্ধাদের নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে তুরস্ক। দেশটির একটি অঞ্চলে কুর্দীরা দখল নেওয়ার বারবার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে কোনোবারই তুরস্কর কোনো অংশ দখলে নিতে পারেনি সংগঠনটি। এদিকে সিরিয়া যুদ্ধে কুর্দীদের অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি কুর্দী যোদ্ধাদের সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে সিরিয়ায় ফ্রি সিরিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে মার্কিন সেনারা যুদ্ধও করছে। এমন অবস্থায় সিরিয়ার মানবিজে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় তুর্কী ও মার্কিন সেনারা। মানবিজে অভিযান চালানোর আগে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান মার্কিন সেনাদের এলাকাটি ছাড়তে আলটিমেটাম দেন। এরপরই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

ভিসা নিয়ে দ্বন্দ্ব:

গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কে ভিসা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আঙ্কারাতে মার্কিন এক কূটনীতিককে গ্রেফতারের পরই দেশটিতে ভিসা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। জবাবে তুরস্কও মার্কিনিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন কূটনীতিকের জড়িত থাকার অভিযোগে ওই কূটনীতিককে গ্রেফতার করে আঙ্কারা। ২০১৬ সালে জুলাইয়ে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে অন্তত ৩০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পেছনে দেশটির নির্বাসিত ব্যবসায়ী নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেছে আঙ্কারা। ফেতুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।

সূত্র: আল-জাজিরা
এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি