ঢাকা, বুধবার   ১৪ মে ২০২৫

আদালতে হট্টগোল, এজলাসেই হেসে ফেললেন বিষণ্ণ মমতাজও

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৪, ১৩ মে ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে এক ব্যতিক্রমধর্মী ও নাটকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় এ শিল্পীকে আদালতে হাজির করা হলে আইনজীবীদের মধ্যে বেশ হট্টগোল শুরু হয়। পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়ার আদালতে এসব ঘটনা ঘটে।

দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে মমতাজকে আদালতে আনা হয়। পরে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এসময় একসঙ্গে অনেক আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হন, এতে আদালতে হট্টগোল তৈরি হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

শুনানির শুরুতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পিপি তার বক্তব্যে মমতাজের রাজনৈতিক ভূমিকা ও অতীত বিতর্ক তুলে ধরেন, যেখানে উঠে আসে তার সংসদে গান গাওয়া এবং রাজনৈতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গ। একপর্যায়ে পিপির কটাক্ষাত্মক ব্যঙ্গোক্তিতে আদালত কক্ষে এ হাসির রোল পড়ে। বিষণ্ণ চেহারার মমতাজও এক পর্যায়ে হেসে ফেলেন।

 পিপি বলেন, আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি।

তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি; গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হয়, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করে গেলেন। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষের ভোট হরণ করলেন। সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি টাকা খরচ হয় সেখানে তিনি গান গাইলেন— ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা।’ সংসদে তোফায়েল, আমুসহ অন্য সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটু কথা বলেননি, সেখানে তিনি বক্তব্য রাখলেন ‘খালেদার বাপের নাম কি?’ বলেন পিপি।

শুনানির সময় জনাকীর্ণ এজলাসের কাঠগড়ায় পুরো সময় গালে হাত দিয়ে বিষণ্ন মনে পিপির বক্তব্য শুনতে দেখা যায় মমতাজকে। একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকত তখন তিনি হাসিনাকে গান শোনাতেন।’ এ সময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়। পিপির বক্তব্য শুনে বিষণ্ণ মমতাজ নিজেও তখন হেসে দেন।

রিমান্ড শুনানির সময় মমতাজের পক্ষে আইনজীবী পাওয়া নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়। পরে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমকে শনাক্ত করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন মমতাজ, যদিও তিনি আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি। বিচারক মো. জুয়েল মিয়া পরে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এই সিদ্ধান্তে আদালতে থাকা আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা স্লোগান দিয়ে সাত দিনের রিমান্ড দাবি করেন।

রিমান্ড আদেশের পর মমতাজকে লিফটে করে নিচে নামানোর প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু আইনজীবীরা বাধা দেন। তাদের দাবি ছিল, বিএনপির নেতাদের যেভাবে সিঁড়ি দিয়ে নামানো হয়েছিল, মমতাজকেও সেভাবে নামাতে হবে। তারা লিফট ব্যবহার না করতে পুলিশকে চাপ দেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে আদালতের প্রসিকিউশন ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম বিচারকের কাছে অনুরোধ জানান মমতাজকে কিছু সময় কাঠগড়ায় রাখতে।

বিচারকের সম্মতিতে প্রায় ২১ মিনিট কাঠগড়ায় অপেক্ষা করেন মমতাজ। পরে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে তাকে লিফটে নামানো হয়। কিন্তু নিচে গিয়েও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। আইনজীবীরা তীব্র কটাক্ষ করতে থাকেন মমতাজকে উদ্দেশ্য করে।

গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মো. সাগর নিহত হন। তার মা বিউটি আক্তার ২৭ নভেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মমতাজ এ মামলায় ৪৯ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, মমতাজ ছাত্র আন্দোলনের সময় দলীয় ক্যাডারদের সহায়তা ও উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি