ঢাকা, শুক্রবার   ০৪ জুলাই ২০২৫

টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ইয়াবা কারবারী নিহত

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৩২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১১:০০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বন্দুকযুদ্ধে নিহত বার্মাইয়া নুর হাফিজ (বায়ে) ও মো. সোহেল।

বন্দুকযুদ্ধে নিহত বার্মাইয়া নুর হাফিজ (বায়ে) ও মো. সোহেল।

Ekushey Television Ltd.

কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাবের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আটক আলোচিত নুর হাফেজ ও সোহেল পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। 

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গাজী পাড়ার পশ্চিমে পাহাড়ে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯৫ হাজার ইয়াবা, ৬টি দেশীয় তৈরি এলজি বন্দুক, ১৮ রাউন্ড তাজা গুলি ও ১৩ রাউন্ড খালি খোসা উদ্ধার করেছে।

নিহতরা হলেন- টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার দিল মোহাম্মদের ছেলে ও শীর্ষ ইয়াবা কারবারি মো. আমিন ওরফে নুর হাফেজ (৩২) ও হ্নীলা  ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার সাব্বির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সোহেল (২৭)। এ ঘটনায় পুলিশের ৫ জন সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, ‘গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে র‌্যাব-৭ এর একটি দল ৮ লাখ ইয়াবা, ৬টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ মাদক ও  ইয়াবা কারবারি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার দিল মোহাম্মদের ছেলে ও শীর্ষ ইয়াবা কারবারি মো. আমিন ওরফে নুর হাফেজ (৩২), হ্নীলা  ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার সাব্বির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সোহেল (২৭), সৈয়দ হোসেনের ছেলে সৈয়দ নুর (২৭) ও মৃত দলিলুর রহমানের ছেলে সৈয়দ আলম প্রকাশ কালুকে (৪৫) আটক করে। 

আটকের পর র‌্যাব সদস্যরা একই দিন বিকেলে টেকনাফ থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন এবং সংশ্লিষ্ট আইনে মামলাও রুজু করা হয়। পরে আটক ইয়াবা কারবারিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ে আরো ইয়াবা মজুদের কথা স্বীকার করলে রাতে টেকনাফ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ইয়াবা উদ্ধারের জন্য অভিযানে নামেন। 

পুলিশ টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গাজী পাড়ার পশ্চিমে পাহাড়ে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা অন্যান্য ইয়াবা কারবারিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। 

এসময় ইয়াবা কারবারিদের গুলিতে টেকনাফ থানা পুলিশের এসআই কামরুজ্জামান, এএসআই মিশকাত, সনজীব  দত্ত, কনস্টেবল মহিউদ্দিন ও সেকান্দর গুলিবিদ্ধ হয়। 

এক পর্যায়ে হামলাকারী ইয়াবা কারবারিরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালিয়ে ৬টি দেশিয় তৈরি এলজি, ১৮ রাউন্ড কার্তুজ, ১৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা, ৯৫ হাজর ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মো. আমিন প্রকাশ নুর হাফেজ (৩২) ও মো. সোহেলকে উদ্ধার করা হয়। 

আহতদের প্রথমে টেকনাফ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মরদেহ দুটি ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাপসাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

ওসি প্রদীপ আরো জানান, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নুর হাফেজ একজন শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজারের ফেরারি আসামি রাকিব আহমেদ মেম্বারের সাথে চোরাচালানের সুবাদে নুর হাফিজ ও মো. নুর সহোদর বাংলাদেশ ভূখন্ডে আশ্রয় নেয়। 

স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার এবং গ্রুপিং রাজনীতির বলীর পাঠা হয়ে এই নুর হাফিজ সহোদর কাছার পাড়ায় বসতি গড়ে জীবন-যাপন শুরু করে। পরিস্থিতির কারণে রাকিব মেম্বারের সাথে নুর হাফিজদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে ওপারে ঘনিষ্ঠজন থাকায় দুই সহোদরই সীমান্ত চোরাচালান এবং মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে উঠে। 

২০১৭ সালে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী নেতাদের সাথে আঁতাত, বাংলাদেশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এই সীমান্তে হয়ে উঠে মাফিয়া ডন। 

পার্শ্ববর্তী কিছু গবিব অসহায় মানুষকে টাকা-পয়সা দিয়ে দানবীর সাজানোর চেষ্টা চালালেও মূলত হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের মাফিয়া জগতই এই নুর হাফিজদের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণে থাকতো। কেউ এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ষড়যন্ত্রের পাতানো জালে আটকে হয়রানির শিকার হতে হতো।

এদিকে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চাপের মুখে প্রাণে রক্ষার্থে হ্নীলা গাজী পাড়ায় এক মহিলাকে বিয়ে করে আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা চালালেও মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের অপকর্ম বন্ধ করতে পারেনি নুর। 

এই মাদক কারবারির ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান খালাসকালে লুটপাট এবং প্রশাসনিক অভিযানে অনেক নাটকীয় ঘটনার সূত্রপাত পর্যন্ত ঘটে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’এই দু’জন নিহত হওয়ার পর হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের মাদক সম্রাজ্য ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।

এআই/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি