ডিএনসিসি কোরবানির ১৩ হাজার ১৭৪ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে
প্রকাশিত : ০৯:৩৯, ৯ জুন ২০২৫

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের লক্ষ্যে । ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার (৮ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ১৩ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএনসিসি জানিয়েছে, ১৩ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়া হযেছে।
এদিকে ঈদের দিনে উৎপন্ন হওয়া কোরবানির বর্জ শতভাগ গতকাল রাতেই অপসারণ করা হয় বলে উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়। তবে রোববার দিনের বেলায় উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে কিছুটা দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। তবে বেশিরভাগ এলাকার বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
ঈদের দিনের বর্জ্য অপসারণ নিয়ে গত শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমরা অনুমান করছি এবছর কোরবানিতে মোট ২০ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হতে পারে। সে হিসাবে আমাদের ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও প্রয়োজনীয় ট্রাক, পিক-আপ, ভ্যানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোরবানির প্রথম দিনে প্রায় ৯ হাজার ২০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে, যার মধ্যে সাত হাজার ৮০০ টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে ডাম্পিং করা হয়েছে। এছাড়া পুরো উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
এদিকে রোববার দুপুর পর্যন্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ এলাকার বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় কোরবানির বর্জ্য পড়ে রয়েছে। এতে কিছুটা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া রাস্তার পাশের ড্রেনে কোরবানির পশুর রক্ত পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
দুপুরের দিকে বনশ্রীর একটি বাসার সামনে কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই বাসার দারোয়ান মো. ইদ্রিস আলী বলেন, আমাদের এখানে কোরবানির মাংস বানাতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছু বর্জ্য রয়ে গেছে। তবে এলাকার বেশিরভাগ বাসার সামনে বর্জ্য নেই। আর সকাল থেকেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। তাই আমরা আশা করছি শিগগির আমাদের এখানেও পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাছাড়া দুর্গন্ধ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য রাতেই ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রামপুরার জাকের গলির বাসিন্দা মো. আক্কাস বলেন, গতকাল আমাদের এলাকা থেকে কোরবানির বর্জ্য খুব একটা নেয়নি সিটি করপোরেশনের লোকজন। ফলে সারারাতই এই এলাকার বেশিরভাগ বাসার সামনে কোরবানির বর্জ্য পড়ে ছিল। এতে এলাকায় কিছুটা দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সকাল থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
তবে গুলশান-১ এর বাসিন্দা সাফওয়ান বলেন, গুলশানে সাধারণত কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকে না। ঈদের দিন পরিষ্কার হয়ে যায়। এবারও ঈদের দিন কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। গুলশান এখন পুরোপুরি পরিষ্কার ঝকঝকে।
অবশ্য বিকেল ৩টার দিকে বাড্ডা লিংক রোডে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কোরবানির বর্জ্য পড়ে নেই। কিন্তু লিংক রোড থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত বেশ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রাস্তাটির একপাশের ড্রেনে পড়ে থাকা কোরবানির পশুর রক্ত থেকে এই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে কেউ কেউ এলাকাটিতে হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে হাঁটছেন।
এমন একজন মো. কিসলু বলেন, আমি গুলশান থেকে হেঁটে বাড্ডা যাচ্ছি। গুলশানের পুরো এলাকাই বেশ পরিষ্কার ঝকঝকে। কিন্তু গুদারাঘাট পার হতেই নাকে বিকট গন্ধ লাগতে থাকে। পরে দেখলাম রাস্তার পাশের ড্রেনে কোরবানির পশুর রক্ত পড়ে রয়েছে, সেখান থেকে এই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত এই রক্ত অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত, না হলে দুর্গন্ধের কারণে এই এলাকা দিয়ে হাঁটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এদিকে বিভিন্ন সড়কে বর্জ্য পড়ে থাকা নিয়ে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল ৭ জুন রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে কোরবানির ঈদের প্রথম দিনের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও নগরীর অনেক স্থানে পশু কোরবানি করা হয়েছে। পশু কোরবানির স্থান থেকে নতুনভাবে উৎপন্ন বর্জ্য ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাতের মধ্যেই সরিয়ে এনে ল্যান্ডফিলে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে রাস্তায় ও এসটিএসে জমা রাখে।
সকালে এসটিএস এবং রাস্তা থেকে থেকে বর্জ্য অপসারণ করে নিয়া যাওয়া হয়েছে। ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই কিছু স্থানের বর্জ্যের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিএনসিসির বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি। আজ এবং আগামীকালও বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
কোরবানি ঈদে নগরবাসী ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত পশু কোরবানি করে থাকেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত নগরীতে বর্জ্য উৎপন্ন হয়। একই সাথে চলতে থাকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। ডিএনসিসির ১০ হাজারের বেশি কর্মী এ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন এবং বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ঘোষিত সময়ের পূর্বেই ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
এসএস//
আরও পড়ুন