নিজের রাজনৈতিক দল গড়ছেন ইলন মাস্ক!
প্রকাশিত : ২২:০২, ৭ জুন ২০২৫

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বাগযুদ্ধ চরমে। একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণও করছেন তারা। এ পরিস্থিতিতেই এবার নিজের রাজনৈতিক দল গড়ে রাজনীতির মাঠে নামার জল্পনা উস্কে দিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
নতুন রাজনৈতিক দলের নামও দিয়ে ফেলেছেন তিনি। শুক্রবারই মাস্ক জানান, এই দলের নাম ‘দ্য আমেরিকা পার্টি।’ তবে এই নাম ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভোট আয়োজন করেন তিনি।
সেখানে মাস্ক প্রশ্ন রাখেন- আমেরিকানদেরকে ঠিকমত উপস্থাপন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজন আছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সম্মতি জানায় ৮০ শতাংশ মানুষ।
এরপরই মাস্ক এক পোস্টে লেখেন, “জনতা রায় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন পার্টির প্রয়োজন রয়েছে যা ৮০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে। আর ঠিক ৮০ শতাংশ মানুষই সম্মতি জানিয়েছে। এটাই নিয়তি।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক পত্রিকা ‘দ্য হিল’ জানায়, ভোটের ফলের ওই পোস্ট শেয়ার করে মাস্ক সম্ভাব্য একটি রাজনৈতিক দলের নাম জানিয়ে লেখেন, ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’। মাস্ক এ বিষয়ে খোলসা করে আর কিছু না বললেও বিষয়টি নিয়ে জল্পনার সূত্রপাত হয়েছে। তিনি নতুন দলের নামকরণ করে ফেলেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও মাস্ক সত্যিই রাজনীতিতে আসবেন, না কি সবটাই তার চমক তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসা দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন কিনা সেটিও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।
যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই হয় মূলত ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে। এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে তিনি কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পদার্পণ করবেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে মাস্কের পোস্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে জোর জল্পনা।
গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাস্কের বড় ভূমিকা ছিল। এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের পর মাস্ক রাজনীতিতে হাতেখড়ি নিতে চাইছেন কিনা? নতুন দল তৈরির আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনমত নিলেন কিনা? চলছে আলোচনা।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও তার দলের অন্যান্য রিপাবলিকানদের জন্য ২৭ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন মাস্ক। সেইসূত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মাস্কের।
ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ের পর মাস্কের জন্য আলাদা একটি দফতর তৈরি করেছিলেন। সেই সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)-এর কাজ ছিল প্রশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা।
গত মাসে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করার পর ট্রাম্প এটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নাম দেন। সেই বিল নিয়ে পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। ইলন মাস্ক গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ওই বিলকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করে প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবারে তারা প্রকাশ্যেই একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়ান।
ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ‘বন্ধু’ ইলন মাস্ককে অনেক সাহায্য করেছেন। তার পরেই মাস্ক পাল্টা দাবি করেন যে, তিনি সাহায্য না করলে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততেই পারতেন না।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, দুইজনের লড়াই ক্রমশই তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প নতুন আঘাত হানার ইঙ্গিত দিয়েছেন টেসলা কোম্পানির সিইও মাস্কের ওপর। আর্থিক অবরোধের হুঁশিয়ারির পাশাপাশি সরকার থেকে যে ভর্তুকি পায় মাস্কের কোম্পানি টেসলা, তা-ও বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে, মাস্কও থেমে থাকেননি। তিনি বলেই চলেছেন, ট্রাম্পের নতুন কর ও ব্যয় বিল যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দিতে পারে। এমনকি, ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন মাস্ক। এই চরম তিক্ততার মাঝেই এবার ট্রাম্পকে জব্দ করতে মাস্কের ওই নতুন পার্টির ঘোষণা।
এসএস//
আরও পড়ুন