মিয়ানমার নাগরিকদের টিপিএস সুবিধা বাতিল করলেন ট্রাম্প
প্রকাশিত : ১১:০৭, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের অভিবাসীদের অস্থায়ী সুরক্ষা (টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস বা টিপিএস) সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এই পদক্ষেপ দেশটিতে টিপিএস নিয়ে বসবাসরত প্রায় ৪ হাজার মিয়ানমার নাগরিকের ওপর প্রভাব ফেলবে। এই সুবিধার আওতায় থাকলে নির্বাসন থেকে সুরক্ষা এবং কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়।
সাধারণত যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে নিজ দেশে ফিরলে যারা বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন, তাদের এই মর্যাদা দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কঠোর অভিবাসনবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে এর আগে আফগানিস্তান, ক্যামেরুন, হাইতি, হন্ডুরাস, নেপাল, নিকারাগুয়া, সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের টিপিএস প্রত্যাহার করেছেন।
এছাড়া, গত শুক্রবার সোমালীয়দের উপর থেকেও এই সুবিধা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নাগরিকদের টিপিএস সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। তবে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জানিয়েছেন, দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরই এই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোয়েম বলেন, সশস্ত্র প্রতিরোধের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায় মিয়ানমার এখনও ‘মানবিক চ্যালেঞ্জের’ মুখে রয়েছে। তবে, তিনি দাবি করেন, ‘জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন ও স্থিতিশীলতার’ উন্নতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত জুলাই মাসে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ডিসেম্বরের শুরু থেকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর মতো বেসরকারি অ্যাডভোকেসি সংগঠনগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে।
এ সংস্থার এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারবাসীর টিপিএস বাতিলের বিষয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভুল ব্যাখ্যা এতটাই গুরুতর যে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।
সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, জুলাই মাসে মিয়ানমারে তথাকথিত জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশটিতে নতুন জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং নয়টি রাজ্য ও অঞ্চলের অসংখ্য শহরে তা কার্যকর করা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের পক্ষে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা ‘অকল্পনীয়’।
সম্প্রতি এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এই নির্বাচনকে কি অবাধ ও সুষ্ঠু বলা যেতে পারে?’
তুর্ক আরও বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ অংশে কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। তারওপর সামরিক বাহিনী বছরের পর বছর ধরে জনগণের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে আসছে, এ অবস্থায় এমন নির্বাচন কীভাবে সম্ভব?’
অধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সামরিক অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাবন্দী করা এবং তার জনপ্রিয় দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-কে ভেঙে দেওয়ায় এই নির্বাচন কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না।
২০২০ সালের নির্বাচনে এনএলডি ভূমিধস বিজয় অর্জন করলেও সামরিক জান্তা জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে বহুমুখী গৃহযুদ্ধে দেশটি জর্জরিত। ইতোমধ্যে গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা ও শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে জান্তা সরকার দেশের বড় অংশ হারিয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বর্তমানে সশস্ত্র সংঘাত, সম্ভাব্য নাগরিক অস্থিরতা এবং ‘অন্যায়ভাবে আটক’ হওয়ার আশঙ্কায় আমেরিকানদের মিয়ানমারে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন










