ঢাকা, শনিবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সেনাবাহিনীর সঙ্গে চলছে বৈঠক: নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে সুশীলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

তরুণদের তীব্র আন্দোলনে তছনছ নেপালের মসনদ। এখন নতুন নেতৃত্ব গঠনের পালা। এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ নেতারা। তাৎক্ষণিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা। তবে এই সরকারের প্রধান কে হবেন তা জানতে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

যদিও ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নেপালের সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন সেনাবাহিনী ও তরুণ নেতৃত্ব। আন্দোলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর এ সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছে ওই সূত্র।

রয়টার্স বলছে, এই সপ্তাহে সংঘটিত ওই গণঅভ্যুত্থানকে নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে ধরা হচ্ছে। যেখানে ৫১ জন নিহত এবং ১৩০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সরকারি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন দেশটির তরুণ প্রজন্ম। আন্দোলনের এক পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও মুহূর্তের মধ্যেই বারুদের মতো গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। ফলে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেন ওলি ও তার মন্ত্রীরা। পরে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওডেলও পদত্যাগ করেন। কার্যত সরকারবিহীন হয়ে পড়েছে দেশটি। যদিও বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছে নেপালের সেনাবাহিনী।

সূত্র জানিয়েছে, কার্কিকে অস্থায়ী প্রধামন্ত্রী করার বিষয়ে একমত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। এ বিষয়ে এক সংবিধান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, সুশীলা কার্কিকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে তরুণ নেতারাও মত দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। সূত্র বলছে, আজই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

৭৩ বছর বয়সী সুশীলা নেপালের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তিনি তার সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। জেনারেশন-জি আন্দোলনকারীরা তাকেই নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে শুক্রবার দুপুরে চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে সুশীলার নাম ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও সেনাবাহিনী এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

চীন ও ভারতের মাঝে অবস্থিত ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে নেপাল। দীর্ঘদিনের বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে লাখ লাখ তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে শুক্রবার থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে। দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে, রাস্তায় গাড়ি চলছে। পুলিশ সদস্যরাও আগের মতো আগ্নেয়াস্ত্রের বদলে হাতে লাঠি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কিছু রাস্তায় এখনও ব্যারিকেড রয়েছে এবং কিছু এলাকায় সামরিক টহলও অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই আন্দোলনে নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে।

আন্দোলনে নিহত এক তরুণের খালা করুণা বুধাথোকি। বলেছেন, ওর বন্ধুরা ফিরে গিয়েছিল কিন্তু ও থেকে গিয়েছিল। পরে জানলাম ওকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২১ জন আন্দোলনকারী, ৯ জন কয়েদি, ৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন জনতা। আশাব আলম ঠাকুরাই নামের এক আন্দোলনকারী মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। তিনিও এই বিক্ষোভে নিহত হন। তার চাচা বলেন, শেষবার ও বলেছিল সে আন্দোলনে আছেন। এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে জানতে পারি, ওর মৃতদেহ মর্গে রাখা আছে। এই নাটকীয় পরিবর্তন নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে জনগণের মধ্যে একটি আশা দেখা দিয়েছে যে সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে দেশে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নতুন সূচনা হতে পারে।

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি