ঢাকা, সোমবার   ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুড়িগ্রামে বন্যায় ৪ শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৪:২০, ১৬ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৪:৫১, ১৬ জুলাই ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটেছে। ধরলা, ব্রহ্মপূত্র ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্লাবিত হয়েছে ৩৯০টি গ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে এক প্রতিবন্ধীসহ ৪ শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

এদিকে, কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের ৪/৫ জায়গায় হাঁটু পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দুরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছে। নাগেশ্বরীতে নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রলংকারী বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪ জন মানুষ দুর্ভোগে পরেছে। বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রীজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৯০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকায় দুধকুমর নদ তীররক্ষা বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার মানুষ। এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট ও সারডোব তীররক্ষা বাঁধ। এখানে চর বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় পাকা সড়ক ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। নাগেশ্বরী-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাটেশ্বরী পুরাতন বাসস্টান্ড, উত্তর কুমরপুর মোড় ও চন্ডিপুর এলাকায় ধরলা নদীর পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাস্তা রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন সরজমিন পরিদর্শন করে এই ব্যবস্থার কথা সাংবাদিকদের জানান।

সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, চিলমারীতে এক প্রতিবন্ধীসহ ৩জন এবং উলিপুরে একটি শিশু মারা গেছে। এরা হলেন- চিলমারী ইউনিয়নের গাছবাড়ী এলাকার মাইদুলের ১৮ মাসের কন্যা মনি খাতুন। সে খেলতে খেলতে পানিতে পরে মারা যায়। অস্টমীর চরের খর্দ্দ বাঁশপাতারী গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ৯মাস বয়সী পূত্র হাসানুল হক চৌকি থেকে পানিতে পরে মারা যায় এবং রানীগঞ্জ থানার চুনমুল পাড়ার প্রতিবন্ধী বীথি (১০) পানিতে ডুবে মারা যায়। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্যাপারী গ্রামে বাড়ির পিছনে খেলতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ (৬) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের কৃষক মাহবুরের পূত্র।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুমানুজ্জামান জানান, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ১১২ সে.মিটার, ব্রহ্মপূত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি কমে গিয়ে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবেলার জন্য গতকাল রাতে পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের উপস্থিতিতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব বিভাগকে সক্রিয় থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি