ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪

সীতাকুণ্ডে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারে নেই কোরবানির প্রস্তুতি

এম হেদায়েত, সীতাকুণ্ড

প্রকাশিত : ২৩:৪৬, ২৭ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১০:৪৪, ২৮ জুলাই ২০২০

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দু'টি ধর্মীয় উৎসব এর মধ্যে একটি ঈদুল আযহা। তবে প্রতি বছরের ঈদের চিত্র আর এবারের এই ঈদের চিত্র যেন আকাশ-পাতাল তফাৎ।

কারো মধ্যে যেন নেই কোন উচ্ছ্বাস। নেই কোনো প্রস্তুতি। এদিকে দেখতে দেখতে খুব কাছে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতরের পরপরই অনেক ঘরে চলে ঈদ-উল-আযহার প্রস্তুতি। চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। এই যেমন এবারে গরু ছাগল মহিষ কি কোরবানি করবে।

কত টাকায় কোরবানি করা হবে, বাজেট অনুযায়ী টাকা জমানো মসলাপাতি কেনা আর সেগুলো শুকিয়ে গুড়ো করার মতন নানান প্রস্তুতি।

মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে এবারে সেই চিরচেনা ব্যস্ততা আর নেই। প্রতি বছর কোরবানি করতো এমন অনেক পরিবারে নেই কোন সাড়া শব্দ।

নেই কোরবানির প্রস্তুতি। তাই এবারের কোরবানি নিয়ে কি ভাবছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনেরা। করোনা কালীন সময়ে এবারের কোরবানি নিয়ে কথা হয় সীতাকুণ্ড পৌরসভাসহ ৯ টি ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চলের কিছু স্থানীয় ও অস্থায়ী লোকজনের সাথে আলোচনা করে জানা যায়। যারা প্রতিবছরই পালন করেন ঈদুল আযহা। এদের মধ্যে কোরবানি পালন করেন এমন ৯০ ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারেই এবার নেই কোনো প্রস্তুতি। কারণ বৈশ্বিক এ মহামারীতে অনেকেই চাকরি হারা অবস্থায় আছেন। দীর্ঘদিন বেকার হয়ে থাকায় জমানো টাকা ভেঙ্গে খেয়েছেন তারা। অনেকে কোরবানির ঈদ পালন করতে গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যান। এবং স্থানীয় প্রবাসীরা কোরবানি করতে ছুটে আসেন প্রবাস থেকে বাংলাদেশে। এবারে তাও পারছেন না অনেকে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কোরবানি উপলক্ষে এবার চাহিদার তুলনায় গবাধিপশু প্রস্তুত রয়েছে বেশি। উপজেলার ছোট-বড় ১ হাজার ৬৮০ জন খামারি ও প্রান্তিক কৃষক সব মিলে গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন ৩৭ হাজার ৩৪৪ টি। এর মধ্যে ষাঁড় ১৭ হাজার ৮৪৮ টি, বলদ ৭ হাজার ৬৫৬ টি, ছাগল ৫ হাজার ৬৭৭ টি ও ভেড়া ২ হাজার ৩৩৪ টি। কিন্তু কোরবানিতে উপজেলায় পশুর চাহিদা ৩৬ হাজার ৭৮৫ টি।
 
উপজেলায় ১১ টি পশুর হাট অনুমোদন পেলেও গতকাল রবিবার পর্যন্ত কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহ জালাল মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, উপজেলায় চাহিদার তুলনায় গবাদিপশু বেশি রয়েছে। তার উপর বাইরে থেকে পশু আমদানি হলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে স্থানীয় খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা।

এই ছাড়া সীতাকুণ্ড একটি শিল্প এলাকা। সীতাকুন্ড সংসদীয় এলাকায় পাটকল করপোরেশন ভূক্ত ৬ টি জুট মিলস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ১০-১৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বেতন-বোনাস না পাওয়ায় অধিকাংশ শ্রমিক কর্মচারী কোরবানি করার কোন প্রস্তুতি নেই বলে শ্রমিক নেতা রবিউল হোসাইন জানান। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে বেতন ভাতা আদায়ের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন করেও কোন সমাধান পায়নি। আরো উল্লেখ্য যে সীতাকুণ্ডের একটি বৃহৎ অংশ প্রবাসে অবস্থান করে। করোনা মহামারির কারণে প্রবাসীরা তাদের দেনা-পাওনা ঠিকভাবে পাচ্ছে না এবং বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারতেছে না। 

আজহার হোসেনের পুত্র ওমান প্রবাসী খোকন জানান, সে বিগত লকডাউন এর আগে বাড়িতে আছে, এখন মহামারীর কারণে সে তার কর্মস্থলে যাইতে পারতেছে না এবং এখানেও টাকা আয় করতে পারতেছে না বিদায় সে এবার কোরবানি তো করতে পারবেই না বরংচ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানান। উত্তর মাহমুদাবাদ গ্রামের আবুধাবি প্রবাসী মোস্তফাও একই কথা বলেন। বাড়বকুন্ডের ইপিজেটে কর্মরত শ্রমিক মোস্তফা কামাল চাকরি না থাকায় এবার কোরবানি করতে পারবে না বলে জানান। ২ নং বাড়িয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর এলাকার ফারুক দীর্ঘদিন বাহারাইন থাকতেন। বর্তমানে লকডাউন এর পূর্বে বাড়িতে আসলে আর যাইতে না পারায় বর্তমানে সে  অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কোরবান করতে পারবে না বলে জানান।

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি