ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪

হঠাৎ ঢেউয়ে লন্ডভন্ড সুরভির স্বপ্ন 

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা 

প্রকাশিত : ১৬:০০, ২৯ জুলাই ২০২০

সুরভি খানম। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। ২০০৬ সালের ৫ জুলাই ভিডাডুবি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল তার জীবন সংসার। ২৭ জুলাই (সোমবার) সকাল বেলা একটু আকাশের রং মেঘলা ছিল। এরই মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঙগনের উত্তাল ঢেউ এসে আঘাত আনে সুরভির পাকাঘরে। সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেয় রাক্ষসী ঢেউ। ঢেউয়ের সাথে ভেসে যায় সুরভির স্বপ্নও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার সকালে লঙগন নদীতে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৫ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঁচড়ে পড়তে থাকে লঙগন পাড়ের বসবাসকারীদের ভিটেবাড়িতে। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, ওই দিন সকাল ১১টার দিকে আকাশে মেঘ দেখা দেয়। সাথে সাথে শুরু হয় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। বাতাসের সাথে ঢেউয়ের শক্তিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাড়ে ১১টার দিকে পাঁচ-ছয় ফুটের একটি ঢেউ আঘাত করে সুরভির বসত ঘরে। যদিও এটি ছিল পাকাভবন, তারপরও একে নিরাপদ মনে করছিলেন না সুরভি। সাথে সাথেই তিনি ঘরের আলমারিতে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করতে তালা খুলেন। 

তারপরও কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকা ঘরের মেঝে ভেঙ্গে তলিয়ে যায় পানিতে। ফলে ভেতরে থাকা সকল মূল্যবান জিনিসসহ আলমারিটি ঢেউয়ের পানিতে ভেসে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় অনেক খোঁজাখুজি করে শেষ পর্যন্ত আলমারিটি পেলেও এর ভেতর থাকা তার সকল শিক্ষা সনদ, জাতীয়তা সনদ, জমির দলিল, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকার কোন কিছুই পাওয়া যায়নি।

সুরভি কান্নাজড়িত কণ্ঠে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাতে জানান, ‘নদীর পাড়ের মানুষ হয়েও এত বড় ঢেউ আগে কখনো দেখিনি। ঢেউয়ে তীব্রতা দেখে ভয় পেয়েছিলাম। তাই আলমারির সকল জিনিসপত্র বের করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় ঢেউয়ে আমার পাকাভবনের একটি রুম সম্পূর্ণ দেবে যায়। সাথে আলমারিতে থাকা আমার শিক্ষা জীবনের সকল মূল সনদপত্র, জায়গা-সম্পত্তির দলিল, ৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা পানিতে ভেসে যায়।’

সুরভির স্বামী মোবারক হোসেন জানান, ‘আমরা গত একদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আছি। আমাদের কোন বিছানা বালিশ কিছুই নেই। শরীরে ভেজা কাপড় নিয়ে আছি। ঘরে কোন শুকনো কাপড়ও নেই। এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ঘরে ঘুমানোর জায়গাটুকুও নেই।’

তিসি জানান, ‘আমরা খুব ভয়ে আছি। যে কোন সময় ঘরটি পানিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। গতকালও খোলা আকাশের  নিচে রাত্রীযাপন করেছি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে আমাদের কোন পরামর্শ বা খোঁজ খবর নেয়া হয়নি।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করা হবে।’

এআই//এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি