ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

করোনায় মৃত্যু: এম্বুলেন্স না দেয়ায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ১৭:০৭, ২৩ এপ্রিল ২০২১ | আপডেট: ১৯:৫৭, ২৩ এপ্রিল ২০২১

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে করোনা রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য এম্ব্যুলেন্স না দেয়ায় শুক্রবার শ্রীমঙ্গল কালীঘাট চা বাগানের শ্রমিকরা কর্ম বিরতি পালন করেছে।

শ্রীমঙ্গল কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা জানান, কালীঘাট চা বাগানের বাসিন্দা পোষ্ট অফিসের অবসর প্রাপ্ত অফিস সহকারী মন্টু তাঁতী (৫৫) গত বুধবার করোনা পজেটিভ হন। বৃহস্পতিবার রাতে তার শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে বাগানের হাসপাতালে এম্ব্যুলেন্স চাওয়া হয়। কিন্তু বাগানের হাসপাতাল থেকে এম্ব্যুলেন্স না দিলে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। পরে শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ফোন করে এম্ব্যুলেন্স চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম শহর থেকে দ্রুত একটি এম্ব্যুলেন্স  প্রেরণ করেন। 

রাতেই তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরু হওয়ার কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই তিনি মারা যান। এদিকে তারা মারা যাওয়ার খবর বাগানে পৌছালে রাতেই শ্রমিকরা কালীঘাট চা বাগানের বালিশিরা হাসপাতালের ডাক্তারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। রাতেই লাশ বাগানে নিয়ে আসলে শ্রমিকরা  লাস দাফনের আগে ডাক্তারকে অপসারণের দাবী তুলেন। খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে সাবাইকে বুঝান এবং লাশ দাফনের অনুরোধ করে দাফনের জন্য অর্থ সহায়তা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে তারা ভোর বেলা লাশ দাফন করে।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, কালীঘাট চা বাগান থেকে এক শ্রমিক ফোন করে করোনা রোগীর জন্য এম্ব্যুলেন্স চাইলে তিনি শ্রীমঙ্গল সদর হাসাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে একটি বে-সরকারী এম্ব্যুলেন্স দিয়ে তাকে মৌলভীবাজার করোনা আইসোলেসন ইউনিটে পাঠান। কিন্তু সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেলে তারা লাশ নিয়ে আসলে শ্রমিকরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে লাশ দাফনের অনুরোধ করেন এবং সৎকারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আসেন।

এ ব্যাপারে কালীঘাট চা বাগানের বাগান পঞ্চাতের সভাপতি অবান তাঁতী জানান, তাদের বাগানের হাসপাতালের ডা: নাজিয়া খানম সব সময়ই তাদের অবহেলা করে। বাগানের এম্ব্যুলেন্সটা দিলে হয়তো আগেই রোগীকে মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়া যেত। হয়তো রোগী বাঁচতো। তিনি জানান, এই ডাক্তার তাদের আন্তরিকতার সহিত দেখেন না। তাই এই ডাক্তারকে সরিয়ে অন্য ডাক্তার দেয়ার দাবীতে কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে ফিনলেটি এর চীফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী জানান, বাগানে একটিই এম্ব্যুলেন্স। এটি শ্রমিকদের চিকিৎসার্থেই ব্যবহার করা হয়। ওই রোগী করোনা পজেটিভ থাকায় চিকিৎসক এটি দিতে রাজী হননি। কারন এ এম্ব্যুলেন্স দিয়ে অন্য রোগীকেও বহন করতে হবে। তাদের একটি বিকল্প এম্ব্যুলেন্স ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয় যার ভাড়া বাগান কর্তৃপক্ষ বহন করবে। তিনি জানান, বাগানের স্টাফরা তার জন্য এম্ব্যুলেন্সও খোঁজছিল। ততক্ষনে উপজেলা থেকে একটি এম্ব্যুলেন্স চলে আসলে তারা বিকল্প এম্ব্যুলেন্স খোঁজা বন্ধ করেন। 

সকাল থেকেই শ্রমিকরা কাজে না গিয়ে ডাক্তারের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মবিরতি পালন করার বিষয়ে তাহসিন আহমদ জানান, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট। ৩ মাস ধরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডাক্তার পাচ্ছেননা। এই ডাক্তার চলে গেলে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হবে। তিনি জানান, চা বাগানের এখন উৎপাদন মৌসুম। কাজে যোগ না দেয়ায় উৎপাদনও ব্যহত হবে।

এদিকে বিকেলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় বিষয়টি নিস্পত্তি হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়রেন বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, অপসারণের দাবি কৃত ডাক্তার নাজিয়া আগামী সোমবার পর্যন্ত কাজে যাবেন না। এর ভিতরে চা শ্রমিকরা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অভিযোগ জানিয়ে একটি দরখাস্ত দিবে। দরখাস্তের বিষয়টি অনুসন্ধান করে সত্যতা নিরিখে ওই ডাক্তারকে অন্য বাগানে বদলি করা হবে এবং আগামীতে কোন শ্রমিক করোনা রোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা বাগান কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে।  এই শর্তে তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং শনিবার সকাল থেকে যথারীতি কাজে যোগ দিবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি