ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

সিনহা হত্যার রায়: আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় হবে এজন্য সকাল থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নারী পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোষাকের বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও।

সোমবার সকাল ৭টা থেকেই আদালত এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। 

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

উক্ত মামলায় ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ১৫ আসামিকে সকালে আদালতে নিয়ে আসার কথা থাকলেও দুপুরে আনা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলার রায় সকালে দেয়ার কথা থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দায়রা জজ কোর্ট এলাকার চারদিকে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আদালতে প্রবেশের একটি ফটক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আদালতের কর্মীরাও ওই ফটক দিয়ে ভেতরে যেতে পারছেন না। 

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। 

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। 

চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

ওই বছরের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। 

এরপর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে। পাশাপাশি সিনহা নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং লে. কর্নেল মর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তাকে সদস্য করে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। 

পরে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

২০২১ সালের ২৭ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে দুই জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। 

দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় চারজনের। তৃতীয় দফায় ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে জেরা সম্পন্ন হয় আটজনের। চতুর্থ দফায় ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয় ছয়জনের। পঞ্চম দফায় ১০ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ষষ্ঠ দফায় ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় ২৪ জনের।

সপ্তম দফায় ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ছয়জন সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের জেরা সম্পন্ন হলেও তদন্ত কর্মকর্তার জেরা অসম্পন্ন ছিল। সর্বশেষ অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। 

এরপর ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। 

সর্বশেষে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি