ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

একটি হুইল চেয়ারের জন্য রব্বানির আকুতি

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:২৬, ৯ এপ্রিল ২০২২

চলাফেরা করতে পারেননা রব্বানি

চলাফেরা করতে পারেননা রব্বানি

রাব্বানীর বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে পড়াশোনা ও খেলাধূলা করার কথা তার। কিন্তু খেলাধূলা তো দূরের কথা, রাব্বানী উঠে বসতেও পারেন না। ১৩ বছর ধরে মলিন চোখে ঘরের কোণায় সারাদিন শুয়ে-বসেই  দিন কাটে তার।

শেরপুরের শ্রীবরদীর সিংগাবরুণা ইউনিয়নের জলঙ্গা মাধবপুর গ্রামের ভ্যানচালক উসমান আলীর ছেলে রাব্বানী।

তার পরিবার জানায়, দুই বছর বয়সে হঠাৎ জ্বর উঠে রাব্বানীর। চিকিৎসায় জ্বর ভাল হলেও তার দু’পা অচেতন হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়ে উঠেনি রাব্বানী। আর এভাবেই ১৩টি বছর ধরে কাটছে ঘরের কোণে।

ভ্যানচালক বাবার সামান্য আয়ের টাকায় পরিবারের ৫ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বাবার পক্ষে ছেলেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে রাব্বানী। প্রতিবেশি শিশুরা যখন স্কুলে যাচ্ছে, রাব্বানী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর শিশুরা যখন খেলাধূলা করছে রাব্বানী তখন বাবার ঘাড়ে উঠে একটু বাইরে আলো বাতাসের শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে।

ভ্যানচালক বাবা উসমান আলী বলেন, “আমার তিন ছেলে, এরমধ্যে সবার বড় রাব্বানী। জন্মের পর ভালাই ছিল সে, হঠাৎ করে তার শরীরে জ্বর আসে। এরপর থেকেই তার দুই পা অবশ হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা  করেও ছেলেকে ভলো করতে পারিনি। এখন আর চিকিৎসা করার সামর্থও নেই। একটি প্রতিবন্ধি কার্ড পেয়েছি। তিন মাস চার মাস পর পর ২২৫০ টাকা হাতে পেলেও তা সংসারেই ব্যয় হয়ে যায়।”

বাবার পিঠে রব্বানি

তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক মতো ভাত খেতে পারি না। ছেলেকে কোথা থেকে হুইল চেয়ার কিনে দিব। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে কয় টাকা পাই, তা দিয়ে কোন মতে কোন মতে সংসার চলে। আমার সংসারে আমি ছাড়া টাকা রোজগার করার মতো আর কেউ নেই।”

মা লাভলী বেগম বলেন, “খুব কষ্ট করে ছেলেকে লালন পালন করে আসছি। এই ছেলেকে ঘাড়ে করে বাইরে নিয়ে যাই আবার আনি। অনেক কষ্ট হয়। ছেলেটাকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারলে কষ্ট থেকে মুক্তি পেতাম। অনেকজনের কাছে একটি চেয়ারের জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্ত কেউ একটি চেয়ার কিনে দেয়নি।”

স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, “অনেকদিন ধরে আমরা দেখে আসছি খুব কষ্টে আছে তারা। এই ছেলেটা ছোটবেলায় ভালো ছিলো, হঠাৎ করেই তার দুই পা অচেতন হয়ে যায়। জমি-জমা তেমন ছিল না, তবে যতটুকু ছিল সবটুকু বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছে। এখন আর টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছে না।”

সিংগাবরুণা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফকরুজ্জামান কালু বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে জানা ছিল না। এখন খোঁজ-খবর নিবো এবং পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব চেষ্টা করবো।”

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি