ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪

মজুরি পেলেন চা শ্রমিকরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:২৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

টানা কর্মবিরতির পর পূর্বের মজুরিতেই বুধবার বিকালে প্রথম তলব (বেতন) পেয়েছেন চা শ্রমিকরা। সাথে পেয়েছেন ৬শ’ টাকা অগ্রিম। আজ পাবেন রেশনও। আগামী সপ্তাহে পাবেন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মজুরি।

বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, রবি থেকে শনিবার পর্যন্ত ৭ দিনের মজুরি দেয়া হয় প্রতি বুধবারে। সাথে তাদের জীবন নির্বাহের স্বার্থে প্রত্যেক শ্রমিককে তাদের চাহিদা অনুযায়ী অগ্রিম ৬০০ টাকা করে দেয়া হয়। তবে পঞ্চায়েত প্রধানদের সাথে আলোচনা করে কোন বাগানে এক হাজার টাকা, কোন বাগানে আটশ’ টাকা, কোন বাগানে ছয়শ’ টাকা করে অগ্রিম দেয়া হয়। যা পরবর্তী তলব (সাপ্তাহিক প্রেমেন্ট) থেকে দুশ’ টাকা করে কেটে রাখা হবে। 

শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, মজুরি পেলেও বাকীদারের টাকা দিয়ে দেয়ায় এ সপ্তাহে ভালো বাজার করতে পারেননি অনেকে। আগামী সপ্তাহটা তাদের চলতে হবে কষ্ট করে। 

এ ব্যাপারে ভাড়াউড়া বাগানের বাঁশমতি তন্তবাই বলেন, তিনশত ষাট টাকা মজুরি আর অগ্রিম ৬শ’ টাকা পেয়েছেন। বাকীই আছে তার হাজার টাকা। এর মধ্যেই টানাপোরনে চলতে হবে বলে জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গল ফুলছড়া চা বাগানের মঞ্জু তন্তবাই জানান, বাগানে তার একার কাজ। পরিবারে ৪ সন্তান বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী মিলিয়ে ৭ জন। বাগানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করেন, এখন চকিদারের কাজ করছেন। এই কাজ করে অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ কম। এই সাপ্তাহে তিনি হাজরি পেয়েছেন ২৩০ টাকা। এক হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হচ্ছিল, অনেকে না নেয়ায় তারও নেয়া হয়নি। এখন সপ্তাহ চালানো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

ফিনলে টি’র সিইও ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিনিয়র সদস্য তাহসিন আহমদ চৌধুরী জানান, শ্রমিকদের অগ্রিম মজুরি দিচ্ছি এ সপ্তাহে, সাথে রেশনও দেয়া হবে। কাজ না করলে রেশন দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু গত সপ্তাহের পুরো রেশন শ্রমিকদের দেয়ার জন্যও সব বাগানে বলে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রেশনের আটা সংগ্রহ করাও হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে দেয়া হবে সে রেশন।

অনেকদিন পর মজুরি মেলায় মাছ খাবে শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের অঞ্জনা ভূইয়ার পরিবার। বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের তলবহাটে দেখা হয় অঞ্জনা ভুইয়ার সাথে। তিনি জানান, তার পরিবারের ৬ সদস্যের জন্য ২০ টাকার মলা/মকা মাছ কিনেছেন। 

অঞ্জনা ভূইয়া আরও জানান, তাদের পরিবারে কাজ করেন তার জামাতা গঙ্গা ভূইয়া, তাও অস্থায়ী। তাই তার মজুরি কম। এর ভেতরেই তাদের চলতে হয়। তিনি বলেন, “২০ টাকার মাছ কিনেছেন এতেই তাদের চলবে। ছোটদের মাছ দেয়া হবে বড়দের মাছের গন্ধ পেলেই চলবে।”

শুধু অঞ্জনা নয় অনেকদিন পর মাছ খাওয়া হবে একই বাগানের চা শ্রমিক ছমিরুন বিবির পরিবারের। ছমিরুন বিবি বলেন, “আজ মজুরি মিলেছে। পরিবারের জন্য তেলাফিয়া মাছ, আর বাচ্চাদেরর জন্য মিঠাই কিনেছেন। মেজাজ বেশ ফুরফুরা।” 

তিনি বলেন, “নাতির জন্য মিঠাই কিনেছি, তাই ভালো লাগছে। এই কয়দিন কি যে কষ্টে কেটেছে তা বলে বুঝানো যাবেনা।”

এদিকে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা জানান, পঞ্চায়েত প্রধানরা কর্মবিরতিকালীন মজুরি পাওয়ার জন্য মৌকিকভাবে জানিয়েছেন মালিকপক্ষকে। আগামী চুক্তির বৈঠকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাংলাদেশীয় চা সংসদকে অনুরোধ করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার ঘোষণা দেয়ার পর গত রোববার থেকে ১৭০ টাকা করে মজুরি পাবেন শ্রমিকরা। যা দেওয়া হবে আগামী বুববার থেকে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি