ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

রোগীর পেটে কাঁচি রেখে অপারেশন, চিকিৎসক জেলহাজতে

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

গাংনীর রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা

গাংনীর রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা

মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকের চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন রাজাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ওই ক্লিনিকে ২০০২ সালে পিত্তথলির অপারেশন করান গ্রামের গৃহবধূ বাচেনা খাতুন। চিকিৎসায় সুস্থ না হয়ে বরং যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে তার। এবছর জানুয়ারিতে এক এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পড়ে তার পেঁটে ৫ ইঞ্চির একটি কাঁচি রয়েছে।

বাঁচেনা খাতুন নামের এক রোগীর পেটে কাঁচি রাখা সংক্রান্ত মামলায় রোববার দুপুরে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তারিক হাসান জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজাতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের গৃহবধূ বাচেনা খাতুনের পিত্তথলির অপারেশন করা হয় গাংনীর রাজা ক্লিনিকে। অপারেশন করেন চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সহকারী হিসেবে ছিলেন ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। 

অপারেশন করার পর সুস্থ্য হওয়া তো দুরের কথা দিন দিন বাচেনা খাতুনের পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পেটের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন তিনি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রিসহ খুইয়েছেন অর্থ সম্পদ সবকিছুই। তবুও ভালো হননি তিনি। 

যন্ত্রণা শেষ পর্যন্ত সইতে না পেরে গত ২০২২ সালেল ২ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রেজা নাসিমের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে তার পরামর্শে এক্স-রে করান। এক্স-রে রিপোর্টে পেটের মধ্যে ৪-৫ ইঞ্চির একটি কাঁচির সন্ধান মেলে। 

এরপর গত ১০ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী মোঃ ওয়ালিউর রহমান নয়ন অপারেশনের মাধ্যমে বাচেনা খাতুনের পেট থেকে কাঁচি বের করেন।

ভুক্তভোগী বাচেনা বেগম এবং তার এক্স-রে রিপোর্ট

এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হওয়ার পর ১৩ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তারিক হাসান স্বপ্রনোদিত হয়ে একটি মামলা করেন ও মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অপু সারোয়ারকে ঘটনা তদন্ত করার নির্দেশ দেন। 

অপরদিকে, মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে ৫ জানুযারি গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুজ্জামান লিটনকে প্রধান ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী মোঃ ফজলুর রহমান, মেহেরপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক ফয়সাল হারুনকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

উভয় তদন্ত কমিটি চিকিৎসক মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামি করে প্রতিবেদন জমা দেয়। মিজানুর রহমান ছাড়াও আসামি করা হয় অ্যানেস্থেসিয়া ডা. তাপস কুমার ও ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজাকে। 

উক্ত মামলায় রোববার দুপুরে অভিযুক্তরা আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত ডাঃ মিজানুর রহমান ও ডা. তাপস কুমারকে জামিন প্রদান করলেও গাংনীর রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি