ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

৫০ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন শামছু মিয়া

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে

প্রকাশিত : ১৬:০৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

বাঁচার প্রয়োজনে নানামুখী পেশায় ব্যস্ত মানুষ। বিচিত্র সব পেশার মানুষগুলো কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে তাদের জীবন। এমনই একজন শামছুর রহমান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ইমিগ্রেশনের সামনে গাছের তলায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।

চারিদিকে মানুষের হৈ চৈ। প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্টে নামে মানুষের ঢল। এই জায়গাটি পর্যটন এলাকা না হলেও প্রতিদিন স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি মানুষের যাতায়াত চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ও দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর। 

জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন কাঁধে করে মুড়ির টিন নিয়ে হাজির হন যশোরের ঝিকরগাছা থানার সত্তোর্ধ্ব ঝালমুড়ি বিক্রেতা শামছুর রহমান। বাসের ভাড়া বেশি তাই ট্রেনে যাতায়াত করেন। ট্রেনের মধ্যে যাওয়া-আসার মধ্যে কিছু বেচাবিক্রিও হয় তার। প্রতিদিন কাঁচা ছোলা, সিদ্ধ ছোলা, ডিম ও ঝাল মুড়ি বিক্রি করে থাকেন। 

প্রায় ৫০ বছর যাবত এ জনপদে শামছুর রহমান ছোলা-মুড়ি বিক্রি করে আজ স্বাবলম্বী।

বেনাপোল চেকপোস্টের শূন্য রেখার কাছাকাছি ১৮০ বছরের শিশু গাছ। সেখানে পাসপোর্টযাত্রীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মানুষ ভীড় জমায়। আর সেই গাছ তলায় শামছুর রহমানের স্বাদের মুখরোচক চানাচুর, ছোলা, মুড়ি, ডিম খায় এসব মানুষ। কোন চেয়ার বা দোকান ছাড়া একটি ইটের উপর বসে মুখরোচক এই খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করেন তিনি।

শামছুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন। তার মনের মাধুরী দিয়ে চানাচুর, মুড়ি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ছোলাসহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের মন আকৃষ্ট করে চলছেন।

বর্তমানে তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানায় সুখের সংসারে আছেন। তার ৫টি ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে দুটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে। তবে তার একটি ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলেমেয়েদের সামান্য লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মেয়েদের ভাল পাত্রের সঙ্গে বিয়েও দিয়েছেন।

শামছুর রহমান বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে এই বেনাপোলে এসব মুখরোচক খাবার বিক্রি করে আসছি। সে সময় সকলে ভাই বললেও এখন বয়স হওয়ায় সবাই চাচা বলে।

সার্বক্ষনিক হাসিখুশি মানুষটির কাছে প্রতিদিন আয় কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন আয় তার ৪ থেকে ৫ শ’ টাকা। এ বেচকেনার উপরই তার সংসার। তাতে ভালভাবে সংসার চলে। 

তবে শামছুর রহমান জানালেন, এখন সব কিছুরই বাড়তি দাম। মানুষকে সেভাবে আর বেশি বেশি মুড়ি দিতে পারেন না।

বেনাপোল চেকপোস্টের জিএম আশরাফ বলেন, শামছুর রহমান একজন রসিক মানুষ। তাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি, তিনি এ চেকপোস্ট এলাকায় ছোলামুড়ি বিক্রি করে আসছেন। মাঝে মাঝে তিনি ক্লান্তি দূর করার জন্য গান গেয়ে থাকেন। 

চেকপোস্ট প্রাইভেট কার চালক মনিরুজ্জামান বলেন, “শামছু চাচাকে আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি এসব ঝাল চানাচুর নিয়ে ছুটাছুটি করতে। এখানে ভারত-বাংলাদেশের অনেক মানুষ তার ঝাল চানাচুর খেয়ে প্রশংসা করেন।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি