ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪

মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ৩ বছর পূর্তি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৪৫, ৩১ জুলাই ২০২৩

কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ খান হত্যার ৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। এই হত্যাকাণ্ডটি দেশের আলোচিত ঘটনা। ইতোমধ্যে সিনহা মামলার রায়ে দুই জনের ফাঁসি এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন দণ্ডের আদেশ হয়েছে। 

মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসী জানিয়েছেন, এই মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। হাইকোর্টেও এই রায় বহাল থাকবে এই আশা তার। 

আজকের এই দিনে অর্থাৎ গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পরপরই এঘটনা আড়াল করতে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল। ঘটনার ৪দিন পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। 

মামলা কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ তদন্তের দায়িত্বপান। র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা মো: খাইরুল ইসলাম এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারদিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় চার জনের। তৃতীয় দফায় ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে সম্পন্ন হয় আটজনের। চতুর্থ দফায় ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত দুইদিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয় ছয়জনের। 

পঞ্চম দফায় ১০ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনদিনে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ষষ্ঠ দফায় ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনদিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় ২৪ জনের। সপ্তম দফায় ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাসহ ৬ জন সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে ৫ জনের জেরা সম্পন্ন হলেও তদন্তকারি কর্মকর্তার জেরা অসম্পন্ন ছিল। 

সর্বশেষ অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। এরপর ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারী কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ থেকে ১২ জানুয়ারী পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে আদাল ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই মামলার রায়ে টেকনাফ থানার বরখান্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যদণ্ডাদেশ দেন। একই সাথে মামলার অন্যান্য আসামী বরখাস্ত এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়া হয়। 

এছাড়াও ‘এপিবিএন’র এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মোঃ রাজীব ও মোঃ আব্দুল্লাহ, পুলিশের কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও পুলিশের কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস প্রদান করেন আদালত।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, মেজর অবঃ সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বিগত তিন বছর কক্সবাজারে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, এই মামলার রায়ে আদালত উল্লেখ করেন মেজর অবঃ সিনহা হত্যা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
 
আদালতের রায়ের পর মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের রায়ের কপি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সকল আসামি হাইকোর্টে আপিল করেছেন। 

তবে এখনও আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়নি। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি