ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হুমকির মুখে বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা পাওয়া টাঙ্গুয়ার হাওর 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৩:২৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিশ্ব ঐতিহ্য বা রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। পর্যটন বিকাশের নামে পরিবেশগত দিক থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমিকে হুমকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। 

পরিবেশের প্রতি খেয়াল রেখে এখানে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কথা থাকলেও, হাওর ভ্রমনের নামে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এতে করে সংকটাপন্ন টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ। দিন দিন আরো বিপন্ন হতে চলেছে এখানকার জীববৈচিত্র। 

‘ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দা’ নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জলাধরটি মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে তার অনন্য জীববৈচিত্রের কারণে। 

সুউচ্চ মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন এই জলাভূমিতে রয়েছে  ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির সরিসৃপ এবং হাজারেরও বেশি প্রজাতির অমেরুদন্ডী প্রাণী। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। 

১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থপনার মধ্যে নিয়ে আসা হয় হাওরকে। 

টাঙ্গুয়ার হাওরের চারপাশের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয় গত কয়েক বছর আগে। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন আসছে হাজারো পর্যটক।
 
পরিবেশগত সংকটাপন্ন এই হাওরের বৈচিত্রের দিকে খেয়াল না করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। শত শত নৌকা নিয়ে হাওরে রাত্রী যাপন করেন তারা। উচ্চ শব্দে চলে গান-বাজনা। আয়োজন করা হয় জোঁছনা উৎসবের। 

হাওরে আসা পর্যটকরা পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা অবাধে ফেলা হয় হাওরের পানিতে। এতে দিন দিন দূষিত হচ্ছে হাওরের পানির স্বচ্ছতা। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া দেশীয় প্রজাতির অনেক সুস্বাদু মাছও। 

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সকল জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারকে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি এলাকার সাধারণ মানুষের। 

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের  সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে  সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো-ট্যুরিজমের আওতায় নিয়ে এসে এটিকে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। পাশপাশি ‘রামসার সাইট’ নামক এই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষায় ইকো-ট্যুরিজম পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প বিকাশের চিন্তা আছে বলেও জানান তিনি। 

আই/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি