ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪

‘আমি স্বামীর বাড়িতে যেতে চাই না লেখাপড়া করতে চাই’

বেনাপোল প্রতিনিধি :

প্রকাশিত : ১৬:০৬, ২ অক্টোবর ২০১৯

ঙে

ঙে

মিম খাতুন (১৪)। কিছুদিন আগে এ কিশোরীকে তার বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে। ফলে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার লেখা পড়া। মিম যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ মহিলা আলিম মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু বিয়ের তিন দিনের মাথায় মিম চলে এসেছে বাবার বাড়িতে। সে স্বামীর বাড়িতে আর ফিরতে চাইছে না। লেখা পড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হতে চায় সে। কিন্তু মেয়ের কোন কথা আমলে না নিয়ে প্রতিনিয়ত ফুলের মত নিষ্পাপ মিমের উপর শারিরীক ও মানষিক অত্যাচার করছেন নিষ্ঠুর পিতা মাতা।

মিম তার মাদরাসার শিক্ষকদের কাছে জানিয়েছে, স্বামীর সংসারে না গিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কান্নাজড়িত অবস্থায় নিজে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন তুলে ধরে মিম। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিজ হাতে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি চেয়েছে সে।

মিম জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মাদরাসা শেষ করে বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ জানতে পারে তাকে বেনাপোল বেড়াতে যেতে হবে। ওখানে গিয়ে সে জানতে পারে তার বিয়ে হবে এখানকার পোড়াবাড়ি নারায়নপুর গ্রামের মুছা গাজীর ছেলে রহমত গাজীর সঙ্গে। এমন করে হঠাৎ বিয়ে হওয়া এবং তার বিয়ের বয়স না হওয়ায় সে বাল্যবিয়ে করতে চায় না বলে প্রতিবাদ করেন। পরে পিতা মাতা তাকে হুমকি ধামকি আর নানান বাহানায় অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয় মিম।

জানা যায়, কাজী এবং হুজুরদের সমন্বয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়েতে জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেখানো হয়েছিলো যেখানে স্পষ্ট অক্ষরে জন্ম তারিখ লেখা ছিলো ১৪-০৯-২০০৫। হিসাব করলে দেখা যায় মিমের বয়স বিয়ের দিনে ১৪ বছর ৯ দিন। অথচ কাজী সাহেব তার পেশাকে পুঁজি করে কিছু অর্থের লোভে নিজের ঈমান ও আইনকে অপব্যবহার করে বাল্যবিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী মিম সাংবাদিকদের কাছে কান্না কন্ঠে জানায়, আমি লেখাপড়া করতে চাই, মানুষের মত মানুষ হতে চাই। তাছাড়া এখন আমার বিয়ের বয়স হয়নি। বাল্যবিয়ে করে আমি অকালে ঝরে গিয়ে জীবনটাকে শেষ করতে চাই না। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমি স্বামীর বাড়িতে যেতে চাই না। তবুও আমার বাবা মা আমাকে জোর করে স্বামীর সংসারে পাঠাতে চায়। যেতে না চাওয়ায় আমার উপরে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করছে। তবুও আমি আমার বাবা মায়ের কোন শাস্তি চাই না। আমি চাই আমার বিয়েটা বাতিল হয়ে যাক।

এ ব্যাপারে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলেয়া পারভীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মিম আমার মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। তার বর্তমান অবস্থার কথা আমি তার মুখ থেকে শুনেছি। সে স্বামীর সংসারে যেতে চায় না। লেখা পড়া শিখতে চায়। মিম লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল জানান, মাদরাসা ছাত্রী মিম খাতুন এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে যদি কোন অনিয়ম পাওয়া যায় তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএ/

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি