ঢাকা, শুক্রবার   ১১ অক্টোবর ২০২৪

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১২:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন কৃষকরা। প্রথম বছরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বুধল, মজলিশপুর ও মাছিহাতা ইউনিয়নের ৮০ বিঘা জমিতে কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। 

ইতিমধ্যেই ফুল ধরতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বিকেলে শহরসহ আশেপাশেল এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা ও চান্দিয়ারা গ্রামে এবং মজলিশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চাষীরা জানিয়েছেন, বুধল ও মজলিশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই গাছে ফুল ধরেতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রান, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। মোট ৮০ বিঘা জমিতে কৃষকরা হাইসান-৩৩ জাতের এ সূর্যমুখী ফুলের চাষ  করেছেন। 

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা গ্রামের ফুল চাষী আহসান উল্লাহ জানান, ‘আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো তার ৫ বিঘা জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারবো।’

একই ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের কৃষক নূরু মিয়া জানান, ‘আগে তিনি তার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ চাষ করতেন। কৃষি অফিসারের পরামর্শে এ বছরই প্রথমবারের মতো ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব সময় খোঁজ-খবর রাখা ও তদারকি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন আসে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে লাভবান হব।’

জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘আগে কখনও সদর উপজেলার কোন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতেন না। এ বছরই মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৮০ বিঘা জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ১০/১১ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদেরকে স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা  হচ্ছে।’

এ ‍কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বাজার থেকে যে সাধারণ সয়াবিন তেল কিনি তাতে ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে তাতে কোনও ক্ষতিকর দিক নেই। সূর্যমুখী তেলটাকে সহজলভ্য করার জন্য সদর উপজেলায়  প্রথমবারের মতো এর আবাদ শুরু হয়েছে। যদি সফল হওয়া যায় আগামিতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘ফেনী জেলার সোনাইগাজীতে সূর্যমুখী ফুল দিয়ে সয়াবিন তেল তৈরীর কারখানা (কোম্পানি) আছে। তাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে আমাদের উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ তারা ক্রয় করবে। কৃষকদের কাছ থেকেই কোম্পানি সরাসরি বীজ ক্রয় করবে। কৃষি অফিস মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।’ 

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চাষীরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে আসছি।’

সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। আশাকরি ফলন খুবই ভালো হবে। আগামীতে আরো বেশী জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি