ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

২৮ ফুট লম্বা কলম তৈরী করলেন নবীনগরের যুবক হায়দার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:০৭, ৪ মার্চ ২০২০

বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেস বুকে বাংলাদেশ ও নিজের নাম তুলতে সেগুন গাছ দিয়ে ২৮ ফুট লম্বা একটি কলম (বলপয়েন্ট) তৈরী করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আবদুল্লাহ আল হায়দার-(৩০) নামে এক যুবক। কলমের গায়ে তিনি আরবিতে আল্লাহতায়ালা ৯৯ টি নাম ও আল কোরআনের ১১৪টি সুরার নাম খোদাই করে লিখেছেন।

আবদুল্লাহ আল হায়দার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের মরহুম শরীফ আব্দুল্লাহ হারুনের ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে হায়দার সবার ছোট।

তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ইতিমধ্যেই হায়দার তার তৈরী কলমটিকে (বলপয়েন্ট) বিশ্বের সর্ববৃহৎ বল পয়েন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদনও করেছেন। স্বীকৃতি পেতে হলে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের দেয়া ৬১টি শর্ত পূরণ করতে হবে হায়দারকে। যদিও, তার দাবি গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের সবগুলো শর্তই পূরণ করেছেন তিনি।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করে এখন বাড়িতেই সময় কাটছে হায়দারের। বাড়ির ছাদের ওপরই সেগুন গাছ দিয়ে তিনি কলমটি তৈরি করেছেন। ৭৮ কেজি ওজনের এই কলমের দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ৮ ফুট (৮ দশমিক ৪৭ মিটার) ও এর প্রস্থ ১৮ইঞ্চি। কলমটিতে আরবি হরফে খোদাই করে লেখা হয়েছে আল্লাহর পবিত্র ৯৯টি নাম ও পবিত্র কোরআন শরীফের ১১৪টি সুরার নাম। হায়দার নিজেই আরবি হরফে নামগুলো খোদাই করেছেন। আর কলমের নিপ তৈরিতে তাকে সহযোগিতা করেছেন মাস্টার ক্রাফটম্যানশিপের হেড ট্রেইনার জাহিদ হোসেন। আর আরবি হরফে লেখাগুলো যাচাইয়ে সহযোগিতা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরামপুর মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নজরুল ইসলাম বিন সাইদ এবং সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের জোবায়দা খাতুন মহিলা মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

হায়দার জানান, গত ২ জানুয়ারি তিনি কলমটি তৈরির কাজ শুরু করেন। এজন্য গ্রামের পাশের লালপুর বাজার থেকে ২৮ হাজার টাকায় ২৫ ফুট লম্বা একটি সেগুন গাছ কিনেন। গাছটি বাড়িতে এনে ছাদের ওপর রেখে শুকিয়ে দুইভাগে কাটেন। এরপর ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ও আধা ইঞ্চি প্রস্থের স্টিলের পাইপ স্থাপন করে গাছটি আঠা দিয়ে যুক্ত করেন। কলমটির জন্য ১৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের নিপ বানাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের একটি ওয়ার্কশপে ৭ বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অষ্টম বারের চেষ্টায় সফল হন তিনি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কলম তৈরির কাজ শেষ করেন তিনি।

আবদুল্লাহ আল হায়দার বলেন, কলমটি (বল পয়েন্ট) তৈরির জন্য ১৫ দিন আরবি হরফে লেখার চর্চা করেছেন তিনি। পরে রাতে কলমের গায়ে আল্লাহর পবিত্র ৯৯টি নাম ও পবিত্র কোরআন শরীফের ১১৪টি সুরার নাম এবং দুটি সুরার চারটি আয়াত আরবি হরফে লিখে খোদাই করেন।

তিনি বলেন, এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কলম (বল পয়েন্ট) হিসেবে স্বীকৃতি পেতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করেছেন। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ তার আবেদনটি গ্রহণ করে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ৬১টি শর্ত দিয়েছেন। তার দাবি সবগুলো শর্তই তিনি পূরণ করতে পেরেছেন। হায়দার বলেন, গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পেরেছেন যে, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের হায়দারাবাদের আচার্য মুকুনুরি শ্রীনিভাসা নামে এক ব্যক্তি ৩৭ দশমিক ২৩ কেজি ওজনের সাড়ে পাঁচ মিটার (১৮ দশমিক ৫৩ ফুট) দৈর্ঘ্যরে একটি কলম (বল পয়েন্ট) তৈরি করেছিলেন।

হায়দার জানান, হায়দার বলেন ধর্মীয় মূল্যবোধের চিন্তা থেকেই কলম তৈরি করেছি। তার তৈরী কলমটিকে বিশ্বের সব চেয়ে বড় কলম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আবেদন জানিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ইমেইল করেন। তার ইমেইলের উত্তরে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যে হায়দারের সাথে যোগাযোগ করবে বলে জানিয়েছে।

হায়দার বলেন, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পেলে কলমটি তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানকে উপহার দিতে চান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের জোবায়দা খাতুন মহিলা মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, কলমে খোদাই করে আরবি হরফে লেখা আল্লাহর পবিত্র ৯৯টি নাম ও পবিত্র কোরআন শরীফের ১১৪টি সূরার নাম তিনি যাচাই করেছেন। সবগুলো নামই নির্ভুলভাবে লেখা হয়েছে।

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি