ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫

বিমান দুর্ঘটনায় এটিসি দায়ী নয়: নেপালি বিমানবন্দর কর্তৃৃপক্ষ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৩, ১৬ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

নেপালের কাঠমন্ডুর ত্রিভুবন বিমান বন্দরের মুখপাত্র এবং মহাব্যবস্থাপক রাজকুমার ছত্রী বলেছেন যে, গত ১২ মার্চ ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এটিসি দায়ী নয়। বরং বিমানটির চালকদের ভুলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

আজ শুক্রবার  ত্রিভুবন বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি বলেন, “ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে পাইলটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল শুধু গাইড দেয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইলটের। পাইলট যদি বলেন, ল্যান্ড করবো না, তাহলে সেটাই ফাইনাল”।

“আর তাকে জিরো টু রানওয়েতে ল্যান্ড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাইলট টু জিরোতেই ল্যান্ড করতে চেয়েছিলেন”।

পুলিশ, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী এবং এভিয়েশন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “বিমানটি স্বাভাবিকভাবে ল্যান্ড করেনি। রানওয়েতে সোজা না নেমে আড়াআড়িভাবে ল্যান্ডিং করেছিল বিমানটি। এরপর স্কিড করে যেতে থাকে। এভাবেই রানওয়ের পাশের ড্রেন পার হওয়ার পর আগুন ধরে যায় বিমানটিত”।

শেষ সময়ে এটিসি’র সাথে বিমানের কথোপকথনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, “বিমানটিকে বারবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল যে, বিমানটিতে কোন সমস্যা আছে কী না? প্রতিবারই নেতিবাচক জবাব দেন পাইলট। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, তখন থেকেই বিমানে ত্রুটি ছিল। বিমানটির অ্যালাইমেন্ট ঠিক ছিল না”।

এসময় ইউএস বাংলার এই বিমানটি নেপালে ‘ত্রুটিযুক্ত বিমান’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল কী না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাজকুমার ছত্রী বলেন, “না বিমানটি ত্রুটিযুক্ত বিমান এমন তালিকায় তার নাম ছিল না”।

পাইলট সুস্থ স্বাভাবিক ছিল কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পাইলট সুস্থ স্বাভাবিক ছিল কী না অথবা বিমানটি ত্রুটি নিয়েই বাংলাদেশ ছেড়েছিল কী না দেখার দায়িত্ব বিমান মালিক প্রতিষ্ঠানের আর বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে আমাদের তদারকির কিছু নেই। আমরা শুধু প্লেনটিকে ল্যান্ড করতে গাইড করতে পারি”।

তাহলে রানওয়ে নিয়ে যে দ্বিধা ছিল তার ব্যাখ্যা কী? এর উত্তরে তিনি জানান, “একবার দ্বিধা ছিল। এটিসি থেকে একবার জিরো টু আরেকবার টু জিরো’তে ল্যান্ড করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটিও পাইলটের কারণেই। কিন্তু পাইলট নিজেই আবার শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত বদল করেন। তিনি শেষবার যে রানওয়েটি চান তাকে সেটিই দেয়া হয়”।

বিমান দূর্ঘটনার তাৎক্ষণিক উদ্ধারকাজ নিয়েও ব্যাখ্যা দেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার সময় আমরা সবাই কন্ট্রোল টাওয়ারের নিচেই এক ভবনে মিটিংয়ে ছিলাম। সাইরেনের শব্দ শুনে আমরা বের হই। টাওয়ার থেকে চারশ’ মিটারের মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আগুন দেখা যায়। তখন দ্রুত বের হয়ে ঘটনাস্থলে যাই, গাড়িও নেইনি। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই হেঁটে পৌঁছে গেছি সেখানে। গিয়ে দেখি, আমাদের দু’টি ফায়ার ভেহিক্যালস ও অ্যাম্বুলেন্স ততক্ষণে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরপর আমি আর্মি, পুলিশ, উদ্ধারকর্মীসহ উদ্ধার অভিযান শুরু করি। তখন এতো আগুন ছিল সেখানে, আমি জীবনেও এমন আগুন দেখিনি। এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু যেরকম উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়। না হলে একজন মানুষও বাঁচতে পারত না”।

প্রসঙ্গত, বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এ দুর্ঘটনার জন্য নেপালের এটিসি’কে দায়ী করেই বিবৃতি দিয়েছিল। এটিসি এবং বিমানটির মধ্যেকার কথোপকথনের একাংশের বরাত দিয়ে তারা দাবি করে যে, এটিসি থেকে দেওয়া বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার কারণেই দূর্ঘটনা কবলিত হয় ‘বাংলা স্টার-২১১’।

তবে যে যার দিকেই কাঁদা ছুড়ুক না কেন ৭১ জন যাত্রী-ক্রু’র মধ্যে ৫১ জন মানুষের নিহতের সঠিক কারণ কী তা হয়তো বিমানটির ব্ল্যাক বক্স থেকে জানা যাবে। ব্ল্যাক বক্সটি এ মুহূর্তে নেপালি বিমান কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছে বলেও নিশ্চিত করেন রাজকুমার ছত্রী।

এসএইচএস/টিকে   


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি