ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

রাহুল কি পারবেন নেহেরু-গান্ধীর স্বর্ণযুগ ফেরাতে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৭, ২৪ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

রাহুল গান্ধীকে তারুণ্যের আইডল ভাবা হলেও ভারতের রাজনীতিতে তাকে নিয়ে বিতর্কও কম নয়। গান্ধী পরিবারের এ সদস্যকে `অপরিপক্ক`, `অপরিণত`, `পার্ট টাইমার` বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি সমালোচকরা। তবে আজকের প্রেক্ষাপট আলাদা। দাদী ও বাবার রক্ত মাড়িয়ে রাজনীতিতে আসা সেই কিশোর এখন পরিণত রাজনীতিক। ছেলে রাহুলের কাঁধে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ভার তুলে দিয়েছেন মা সোনিয়া গান্ধী। রাহুলের হাত ধরে গান্ধী-নেহেরুর সময়কার স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে এমন স্বপ্ন দেখছেন দলটির নেতারা। তবে রাহুল কি পারবেন স্বর্ণযুগ ফেরাতে?
ভারতীয় রাজনীতিতে রাহুলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল তথাকথিত অভিজ্ঞ মহল। বিশেষ করে গত নির্বাচনে বিজেপির কাছে দলের ভরাডুবিতে রাহুলের রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও পরিপক্কতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। লোকসভা নির্বাচনের পর বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির জয়ে রীতিমতো কোনঠাসা  হয়ে পড়েছিলেন রাহুল। দলের মধ্য থেকেই অনেকে দাবি তুলেছিলেন, রাহুলকে দিয়ে কংগ্রেস টিকবে না, তারা প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতির দৃশ্যপটে দেখার দাবি তোলে। একদিকে ছেলের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা অন্যদিকে নিজের শারিরিক অসুস্থ্যতা সবমিলিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সেই  জায়গা থেকে রাহুলের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার ঝুকি নিলেন সোনিয়া। যেটি বছর খানেক আগে কেউ ভাবতেও পারছিল না।
দায়িত্ব পাওয়ার পর কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ যে তার হাতের তালুতেই, তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন রাহুল। দু`দিন আগেই দিল্লিতে শেষ হলো জাতীয় কংগ্রেসের প্ল্যানারি অধিবেশন। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে প্রথমবার এমন অধিবেশনে হাজির ছিলেন রাহুল। সেখান থেকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সব বিরোধী দলকে নিয়ে ইঙ্গিত দিলেন তৃতীয় ইউপিএ জোট গড়ার। যার নেতৃত্বে থাকবেন তরুণ তুর্কি রাহুল। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে আলাদা কোনো জোট গড়ে না বসেন, সেজন্য মমতার সঙ্গেও কথা বলতে চান রাহুল। তাকে নিয়ে বিকল্প কোনো ফ্রন্টও গড়তে চান তিনি। স্বভাতবই রাহুলকে নিয়ে নিছক কৌতুকের পথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে মোদির দল বিজেপিকে।
এবার কংগ্রেসের অধিবেশনের বিশাল মঞ্চ ছিল ফাঁকা। শুধু বক্তা আছেন, কোনো নেতা নেই। রাহুল সেই মঞ্চ দেখিয়ে বললেন, `অন্যদের সভা দেখুন। কোনো বৈঠকে এমন খালি মঞ্চ দেখতে পাবেন না। ভারতের যুবসমাজ, এই মঞ্চ আপনাদের জন্যই ফাঁকা রেখেছি। দেশকে যদি বদলাতে হয়, তাহলে সবাইকে দলে আনতে হবে। আপনারাই বদলাতে পারেন। যাদের মেধা আছে, মনে ভারতের জন্য আগুন জ্বলছে, তাদের এই মঞ্চে আনব। যেভাবে `৭০-৮০ সাল আগের কংগ্রেস ছিল জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, সর্দার প্যাটেল, আজাদ, জগজীবন রামদের। তাদের মধ্যে যে কেউ দেশ চালাতে পারতেন। ওটাই আমার স্বপ্ন, ওই দিনের মতো কংগ্রেস দলকে দেখতে চাই।
দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক গুলসন খাতরির মতে, গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই অপরিপক্ক তকমা ঝেড়ে ফেলে সিরিয়াস রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন রাহুল গান্ধী। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি বহু কৌশলে রাহুলকে নিয়ে মশকরা করে আসছিল। ইদানীং ঠিক উল্টো ছবি ধরা পড়ছে। ব্যাংক জালিয়াতি ইস্যু জনসমক্ষে তুলে ধরার পর মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিজেপি, আরএসএস এবং নরেন্দ্র মোদির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবেন রাহুল এবং তার দল কংগ্রেস।
অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির বাঙালি সদস্য শুভঙ্কর সরকারের মতে, জওয়াহেরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীদের দেখানো পথেই এগোচ্ছেন রাহুল। আরও উন্নতি, অনেক বেশি উন্নতি চাইছেন। দেশে কৃষির উন্নতি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সম্প্রীতি, পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তিনি।
মোদি সরকারকে কুপোকাত করতে রাজনৈতিক কৌশলের কথাও আছে রাহুলের মাথায়। পাশাপাশি দল ও দলীয় কর্মীদের `অক্সিজেন` জুগিয়েছে সেই কৌশল। শুধু বিজেপির নিন্দা কিংবা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ নয়, সেই গণ্ডিতে আটকে থাকতে চাইছেন না কংগ্রেস সভাপতি। দেশ ও দলীয় কর্মীদের রাহুল গান্ধীর বার্তা- মোদি মায়া শেষ। তৈরি থাকুন। ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির নীতিগত পার্থক্য তুলে ধরার সময় তিনি বলেছেন, বিজেপি একটি সংগঠনের কণ্ঠস্বর। কিন্তু কংগ্রেস এই দেশের কণ্ঠস্বর।
এতকিছুর মাঝে মনমোহন, সোনিয়াদের সামনেই ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের পতনের কারণ অনুসন্ধান করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। রাহুলের মতে, সরকারের শেষ কয়েকটা বছর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল কংগ্রেস। সেই কারণেই মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
একটি স্বপ্নের কথা বলেছেন রাহুল। তা হলো, গোটা বিশ্বে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুটি মতবাদ চালু আছে। তিনি চান আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতের নিজস্ব মতবাদ তৈরি হোক। তা হবে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও অহিংসার মতবাদ।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
/এআর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি