ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

প্লেবয় থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ ইমরান খান!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৮, ২৬ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪১, ২৬ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে ইমরান খান। তার রাজনৈতিক জীবন যেমন বর্ণাঢ্য তেমন তার ব্যক্তিগত জীবনও বৈচিত্র্যতায় পরিপূর্ণ। লন্ডনের একজন প্লেবয় থেকে পাকিস্তানের ধর্মপ্রাণ রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার কাহিনী যেন সিনেমাকেও হার মানায়। জানা গেছে, ইমরান খানের বাবা একজন ধনী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। যুক্তরাজ্যে গিয়ে ওরসেস্টারের রয়াল গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন ইমরান। এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কেবলি কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

একদিকে ক্রিকেট অন্যদিকে প্লেবয় জীবন
যুক্তরাজ্যে থাকার সময় ইমরান ক্রিকেটেও তার প্রতিভা প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ডের সাসেক্স টিমে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। পাশাপাশি আনন্দ-ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দেন। নারীদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন।

তারুণ্য থেকেই ইমরানের গ্ল্যামার প্রকাশিত হয়। হ্যান্ডসাম পুরুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি যেন তাই ছিলেন। আর তারুণ্যেই তিনি পাকিস্তান ছেড়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। লন্ডনের সমাজে লেডিকিলার হিসেবেই খ্যাত ছিলেন ইমরান। লন্ডনের বিভিন্ন ক্লাবে ইমরান যাতায়াত করতেন। ধবধবে সাদা বান্ধবীদের পাল্টে নিতেন প্রায়ই। ড্যান্স ফ্লোরে ইমরানের পদচারণা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এক সময় ট্র্যাম্প নামে একটি নাইট ক্লাবই যেন তার বাড়িঘর হয়ে ওঠে।

তেমনই এক বিনোদন ক্লাবে ইমরান খান ১৯৮৬ সালে পরিচিত হন ধনী বাবার কন্যা সিতা হোয়াইটের সঙ্গে। তার বাবা ছিলেন গর্ডন। তিনি পরবর্তীতে লর্ড উপাধি পান। এরপর কিছুদিন তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল ইমরানের। তার সঙ্গে ইমরান খানের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। টায়রিয়ান নামে সে কন্যার পিতৃত্ব অস্বীকার করেছিলেন ইমরান। পরে অবশ্য ১৯৯৭ সালে আদালতের এক আদেশে ইমরান খানকেই পিতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হয়।

প্রায় এক দশক পর ইমরান খানের সঙ্গে পরিচয় হয় জেমিমা গোল্ডস্মিথের। তিনি আরেক ধনকুবেরের কন্যা। ১৯৮৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান নারীসঙ্গকে অত্যন্ত ভালোবাসেন বলে জানান। তবে এজন্য যুক্তরাজ্যই উপযুক্ত বলে তিনি স্বীকার করেন।

১৯৯২ সালে এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য বিষয়টিকে অস্বীকার করেন ইমরান। তিনি নিজের প্লেবয় ইমেজকেও অস্বীকার করে বলেন, আমি নারী কোনো অসচ্চরিত্র ব্যক্তি নই। আমি একা পুরুষ হওয়ায় মানুষ নানা কথা বলে।

১৯৯৫ সালে ইমরান বিয়ে করেন ব্রিটিশ ধনকুবের জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমাকে। ২০০৪ সালে দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ইমরান। বিয়ে করেন টেলিভিশন উপস্থাপক রেহাম খানকে। ১০ মাসের মাথায় তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুশরা মানেকা নামে একজন আধ্যাত্মিক নেত্রীকে বিয়ে করেন ইমরান খান। মাস দু-একের মধ্যে সে বিয়েরও ইতি ঘটে।

লন্ডনে যারা ইমরান খানকে দেখেছেন, তাদের পক্ষে ইমরানের পরবর্তী জীবনকে বিশ্বাস করা কঠিন বলেই জানিয়েছে ডেইলি মেইল। অনেকটা যেন বিপরীত চরিত্রেই রূপান্তর ঘটে ইমরানের!

ক্রিকেট থেকে রাজনীতির মঞ্চে

ইমরানের পাকিস্তানের জীবনও কম বর্ণাঢ্য নয়। পাকিস্তানের অন্য সব রাজনীতিবিদ থেকে ইমরান খান ভিন্ন। তিনি রাজনীতিতে নামার আগে ক্রিকেটার হিসেবে একজন ‘জাতীয় বীর’ হয়ে ওঠেন। এরপর ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেন ইমরান।
তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক ছিলেন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয় করে।

ক্রিকেটের মূলধনকে রাজনীতির মূলধনে রূপান্তর প্রায় অসম্ভব একটি কাজ ছিল। ইমরান খানকে এজন্য দীর্ঘ দুই দশক অন্ধকারের মাঝে কাটাতে হয়েছে। আশার আলো দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।

ক্রিকেটার হিসেবে সাফল্যের মাঝেও তিনি এক পর্যায়ে সব ছেড়ে লন্ডনে স্থায়ী হন। অক্সফোর্ডে পড়াশেনা করেন। এরপর পাকিস্তানের খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৯২-সালের বিশ্বকাপের আগে পাক বোর্ড এবং সবার অনুরোধে ফিরে এসে দলের দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তানকে জিতিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ।

রেহামের অভিযোগ-

ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী রেহাম খানের আত্মজীবনীতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। বইটির কিছু অংশ ফাঁস হওয়ার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর ঢেউ নির্বাচনেও এসে পড়ে।

রেহামের অভিযোগ, ইমরান খান একজন ভণ্ড এবং মিথ্যাবাদী। এছাড়া তিনি রোজা রাখেন না এবং নামাজও পড়ে না বলে অভিযোগ তার।

রেহাম দাবি করেন, পাঁচজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে ইমরান খানের ঔরসজাত পাঁচ সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয়ও আছে। ওই নারীরা তাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে কখনো তা প্রকাশ করেননি।

নারী রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে কেলেঙ্কারি-
গত বছরের মাঝামাঝিতে ইমরানের দল পিটিআইয়ের এক নেত্রী ও জাতীয় পরিষদের সদস্য আয়েশা গুলালাই অভিযোগে করেন, ইমরান তাকে ‘অশোভন’ খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠায়। এ অভিযোগ এনে সে নারী পিটিআই ছাড়েন। এ নিয়ে পাকিস্তানের মিডিয়ায় নানা রসাত্মক খবরও প্রকাশিত হয়।

তবে ইমরান সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) আয়েশাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

রাজনীতিবিদ হিসেবে সাফল্য

রাজনীতিবিদ হিসেবে ইমরান খানের জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় প্রায় ১৯৯২ সালে। সে বছর তিনি ৪০ বছরে পা দেন। তার টিম বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয় করে। সে বছরেই তিনি সাউকাত খানুম ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন, যা দুই বছর পরে বাস্তবায়িত হয়। এ বছরেই তিনি মুসলমান হিসেবে তার বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ করতে শুরু করেন।

২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অবশ্য ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য ‘স্বর্ণযুগ’। তিনি তার গুরু আসগার খানের মতো জীবযাপন ও মৃত্যুবরণ করার ধারণা ত্যাগ করেন। আগ্রাসী রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেন। সুযোগের সন্ধান করতে থাকেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর এবার সে সুযোগ এলো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আর অল্প দূরত্বই বাকি রয়েছে ইমরানের সামনে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ইনিংস কিভাবে শেষ করেন এটাই দেখার অপেক্ষায় থাকবে এখন সারা বিশ্ব।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইনডিয়া, দ্য ডন, ডেইলি মেইল।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি