ঢাকা, সোমবার   ১৪ জুলাই ২০২৫

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৬, ২১ আগস্ট ২০২১

Ekushey Television Ltd.

‘আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি/ নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে/পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?/এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,/এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!’। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ ‘তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?/পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।’- ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্য গ্রন্থের প্রস্থান, নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় এবং অমীমাংসিত সন্ধি কবিতার এই লাইনগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কবিতাগুলোর কবি হেলাল হাফিজ। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করানো হয়েছে। ৭২ বছর বয়সী কবি হেলাল হাফিজের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।

জানা যায়, কবি হেলাল হাফিজ বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে সাময়িকভাবে ভর্তি করা হয়েছিল রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে। কিডনি, ডায়াবেটিস ও নিউরোলজিক্যাল সমস্যা আছে কবির।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে জননন্দিত এ কবিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। কবির চিকিৎসার সার্বিক সমন্বয় করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ডা. আশেকুজ্জামান। 

১৯৬৯ সাল। গণঅভ্যুত্থান চলছে। এমন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লিখে ফেললেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ নামে একটি কবিতা, যার প্রথম দুটি লাইন স্লোগানের মতো মানুষের মুখে মুখে—‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’

কবিতাটি তখনকার কোনো পত্রিকা প্রকাশ করার সাহস না পেলেও আহমদ ছফা’র কল্যাণে রাতারাতি এ-দুটি লাইনে ছেয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দেয়াল। এ দুটি লাইন গণঅভ্যুত্থানকে যেন বারুদের মতো উসকে দেয়। ফলশ্রুতিতে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যান এই কবিতার স্রষ্টা, কবি হেলাল হাফিজ। 

উল্লেখ্য, এই জনপ্রিয় কবি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক দেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগদান করেন । সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন নির্মলেন্দু গুণ। ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেন।

কবি হেলাল হাফিজের প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বইটির মুদ্রণ হয়েছে ৩৩ বারের বেশি।

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ কখনো সংসারমুখী হননি। চিরকুমার এই কবি এর আগে শাহবাগের একটি আবাসিক হোটেলে থাকতেন।

কবিতার জন্য ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি