ঢাকা, বুধবার   ০২ জুলাই ২০২৫

অপুষ্টি ও পরিচর্যার অভাবে দেশে প্রতিবছর ৭৪ হাজার নবজাতকের মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২১, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

পরিচর্যার অভাব ও অপুষ্টির কারণে প্রতিবছর দেশে প্রায় ৭৪ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ শতাংশ শিশু মারা যায়। এছাড়াও প্রথম সাত দিনে ২৫ শতাংশ ও জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে ২৫ শতাংশ শিশুর।

আইসিডিডিআরবি ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত ‘প্রজন্ম প্রকল্প’ শিরোনামে পরিচালিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট, ইনফেকশন ও সময়ের আগেই জন্ম নেওয়ায় এসব নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। তাদের মতে, নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে হলে মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শিশুকে খাওয়াতে হবে মায়ের বুকের দুধ। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন সেবার মাধ্যমেই নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।

বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার কমে এলেও নবজাতক শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে।

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। আর ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী মারা যাওয়া ৫২ লাখ শিশুদের ৪৬ ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে একমাসের মধ্যে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এভাবে শিশু মৃত্যুরোধ করা না গেলে ২০১৭ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়ার একমাসের মধ্যে মারা যাওয়া নবজাতকের সংখ্যা হবে ৩ কোটি।

দেশে নবজাতকের মৃত্যুর হার কমলেও সেটা খুবই ধীর গতিতে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হারের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশই হচ্ছে নবজাতকের মৃত্যু। এই মৃত্যুর জন্য তিনটি কারণকে দায়ী করেছেন তারা। এগুলো হলো—জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট, ইনফেকশন ও কম ওজনের অর্থাৎ সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তৃণমূল-পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় নারীদের গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ। মা ও নবজাতকের মৃত্যুরোধে আগামী বছরের মধ্যে ৪২১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার ধাত্রী নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাটারনাল, নিউনেটাল, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্স হেলথ প্রকল্পের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার  বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতিবছরই ২০ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় এক লাখ ২০ হাজারের মতো নবজাতকের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় ৫০ শতাংশের। আর নবজাতকের মৃত্যু রোধে মায়েদের বিশেষ সেবার মধ্যে আনতে হবে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ম্যানেজার ডা. ইশতিয়াক মান্নান গণমাধ্যমকে  বলেন,‘এমডিজিতে আমরা আমাদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে যে অর্জন করার কথা ছিল, তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। আর পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার যে হারে কমছে, নবজাতকের মৃত্যুর হার সে হারে কমছে না। বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের বিপরীতে মৃত্যু হচ্ছে ২৮ জনের। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মৃত্যুর হার ১২ সংখ্যায় নিয়ে আসা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফফাত আরা শামসাদ বলেন,‘শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যদি মায়ের বুকের দুধ পান করানো যায়, তাহলে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। আবার জন্মানোর ছয় মাস-পর্যন্ত যদি একাধারে মায়ের বুকের দুধ পান করানো হয় শিশুকে, তাহলে ৫ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার কমবে শতকরা ১৩ ভাগ।

 কেআই/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি