আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপিত
প্রকাশিত : ২৩:২৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২৩:২৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭

‘সবার জন্য টেকসই ও সহিষ্ণু সমাজ রুপান্তরের অভিমুখে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠন পরিষদ (পিএনএসপি) উদ্যেগে ২৬তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস পালিত হয়েছে।
আজ রবিবার বিকালে রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসময় প্রতিবন্ধীরা গানে গানে জীবনের জয়গানে অংশ নেন। দৃষ্টি, মনো সামাজিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রুনা ইসলাম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমি এই পৃথিবীর আলো দেখি না। আমার ভিতরে অনেক কষ্ট কাজ করে। তবুও আমি বসে থাকি না। আমি গ্রামীণ ফোনে চাকুরি করি। পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করি। কারো অনুগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না ”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনডিডি ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ করিম, পিএনএসপি’র সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, রফিক আজমসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এম ওসমান খালেদ।
মাসুদ করিম বক্তব্যে বলেন, “সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ প্রতিবন্ধী। সেই হিসাবে দেশে মোট ১৬ লাখ প্রতিবন্ধী আছে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদেরকে রাষ্ট্রের সক্রিয় নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছেন। যা প্রশংসার দাবি রাখে। তাছাড়া প্রতিবন্ধীদেরকে প্রতিবন্ধী নামে না ডেকে অন্য কোনো নামে ডাকা উচিত বলে মনে করি। অনেক সময় এদেরকে আমরা মানুষ বলেও মনে করি না। এই ধারণার পরিবর্তন করা দরকার। বিশ্বের বড় বড় অনেক মানুষ আছেন যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন। এদের মধ্যে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মহাকাশের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। হোমার ছিলেন জন্মান্ধ, বিটোফেন ছিলেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এমন কি আলবার্ট আইনস্টাইন ও প্রতিবন্ধী ছিলেন।
সালমা মাহবুব বলেন, “আমরা সহিষ্ণু সমাজের কথা বলি। নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি। এই রকম অনেক কথা প্রতি দিন শুনা যায়। অথচ প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমরা কতটুকু দায়িত্বশীল। প্রতিবন্ধীদের দীর্ঘদিনের একটাই দাবি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর। যা আমলতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। প্রতিবন্ধীদের দাবি এখনো অধরা রয়ে গেছে। যদি অধিকার থাকে কাগজে, নথিতে তবে সে অধিকার কখনো আদায় হবে না। যদিও সরকার এই ব্যাপারে এখন অনেক বেশি সচেতন রয়েছে, সে জন্য আমরা আশা করতে পারি আমাদের সবকটি দাবি পূরণ হবে। যদি এসডিজি লক্ষ্য মাত্রা পূরণ করতে হয় তবে প্রতিবন্ধীদেরকেও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, “প্রতিবন্ধীদের যদি সমাজের আর বাকি সব সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া যায় তবে কোনো প্রতিবন্ধী আর বোঝা হয়ে থাকবে না। তারা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই বহন করে দেশের উন্নয়নে জন্য কাজ করতে পারবে। দেশের এই বিশাল প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে দেখাশুনা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের পড়াশুনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষমতায়ন ও মর্যাদাকে নিশ্চিত করতে দরকার। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারলে সমাজ-রাষ্ট্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
কেআই/টিকে
আরও পড়ুন