ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

‘তরুণরা এগিয়ে আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’    

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১৪, ২ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৩২, ২ জানুয়ারি ২০১৮

তরুণরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘প্রশান্তি’র এডমিন ফারুক রহমান মিন্টু।

মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদেরকে নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রায় ৩৫টি সংগঠন অংশ গ্রহণ করে। মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়। তার মধ্যে ‘প্রশান্তি’র এডমিন এসব কথা বলেন।

 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে মাদকের যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটা যদি নির্মূল করা সম্ভব না হয় তাহলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশ পারমানবিক বোমার চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।

 

তিনি বলেন, এক সময় শুধু একটা শ্রেণির মানুষেরা মাদক গ্রহণ করতো। এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষই এতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সব চেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো স্কুল পড়ুয়ারাও এখন মাদকে আসক্ত। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে গণজোয়ার সৃস্টি করতে হবে। একটি বিপ্লব করতে হবে। তাহলেই এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলে যে জোরালো ভূমিকার কথা বলেছেন সেটি যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এ দেশ থেকে মাদক র্নিমূল সম্ভব হবে বলে মনে করি।  

 

মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির  ‘স্ট্যামফোর্ড মাদকবিরোধী ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন। তারা সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বেনজির আবরার মাদক নিয়ে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, আমরা মাদকের ছোবল থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে ২০১৩ সালের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রাকিল খোন্দকার নিশান এর উদ্যোগে এই সংগঠন নিয়ে কাজ শুরু করি। এটিই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একমাত্র মাদকবিরোধী সংগঠন। আমরা চেষ্টা করছি এ সম্পর্কে ছাত্রদের সচেতন করতে। আমরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত কনসার্ট, গণসংযোগ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকি। এরপর প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি। কেউ যেন মাদকে আসক্ত হয়ে না পড়ে সে জন্য নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।  

 

টিনএজরাই এখন মাদকে বেশি আসক্ত বলে জানান মাদকাসক্তি নিরাময় সংগঠন ‘অর্জন’ এর কেইস ম্যানেজার’ রিয়াদ রহমান। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন থেকে মাদক নিয়ে কাজ করছি। আগে অভিভাবকরা মাদক নিয়ে তেমন সচেতন ছিল না। তারা এটা প্রকাশ করতে লজ্জা পেত। এখন অনেকে এগিয়ে আসছে। মিডিয়া বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারের কারণে সচেতনতা বাড়ছে। কেউ এখন লুকিয়ে রাখতে চাচ্ছে না। তবে বর্তমানে টিনএজরাই মাদকে বেশি আসক্ত। আবার দেখা যাচ্ছে যারা মাদক নেয় তারাই আবার বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও এদিকে ঝুঁকছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ৮ম, ৯ম শ্রেণির অসংখ্যা ছাত্র-ছাত্রী মাদকে আসক্ত। তাই মাদক থেকে বাঁচতে হলে অভিভাবকসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে পারলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

 

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ আয়োজনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রাঙ্গণে বসে এই মেলা। মাদক নিরাময় নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো তাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন।  জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সবার সমন্নীত সহযোগিতা। আর যারা মাদকে আসক্ত তাদেরকে সঠিকভাবে গাইড লাইন দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সমাজের মধ্যে যারা মাদকে আসক্ত হয়ে গেছে তাদেরকে লুকিয়ে না রেখে তাদের সুস্থতার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কারণ একটি পরিবারে একজন মাদকে আসক্ত হলে পুরো পরিবার তখন এর ভুক্তভুগি হয়ে যায়। তাই অভিভাবকদের মাদকের বিষয়ে সচেতন হওয়া খুব জরুরি বলে মনে করেন তারা।

 

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ঢাকা উত্তর) মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিয়মিত আমাদের অভিযান চলছে। যে সব জায়গায় মাদকের আসর বসে সেগুলো আমরা ভেঙে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার ফলে সীমান্তে ৭৪টি ফেনসিডিল কারখানা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এভাবে আমাদের মাদক নির্মূলের চেষ্টা চলছে।

 

এসি/এসএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি