ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪

ভোটের চেয়ে অভিযোগেই বেশি ব্যস্ত ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:৪০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রচারণায় মনোযোগ না দিয়ে কেবল অভিযোগ জানাতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। তাদের কার্যক্রম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগেই সীমাবদ্ধ ছিল। অভিযোগ করতে সরব থাকলেও ভোটকেন্দ্রের তৎপরতায় ছিল তারা নীরব। ভোট কেন্দ্রগুলোতে তাদের কিছু সংখ্যক এজেন্ট ও নেতাকর্মী সকালের দিকে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতি কমে যায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের কিছু কেন্দ্র পরিদর্শন করে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে।  

রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-১০ আসনের হাজারীবাগ সালেহা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র, হাজারীবাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ঢাকা-৭ আসনের ভাগলপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট থাকলেও অন্য প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট ছিল না। এছাড়াও এমন চিত্র দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার ভোট কেন্দ্রগুলোতে। তারা সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট দিয়েছিল সেগুলো থেকেও বের হয়ে আসেন অনেক এজেন্ট।

ঢাকা-৫ আসনে মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের ৯৫ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আসাদুজ্জান জানান, এই কেন্দ্রে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই। বেলা ১২টার দিকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ধানের শীষের এজেন্টরা আসেননি। শুধু নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার এজেন্ট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আম প্রতীকের এজেন্টরা এসেছেন। 

৯০ নম্বর মাতুয়াইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হান্নান জানান, তার কেন্দ্রে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট থাকলেও ধানের শীষের এজেন্ট নেই।

ঢাকা-১৪ আসনে কামাল মজুমদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহেদুল কবির খান বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি, ভোট নির্বিঘ্নে চলছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যদের এজেন্ট আসেনি, হাতপাখার একজন এজেন্ট এলেও কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে যান।

এছাড়া ঢাকা-৮ আসনে শান্তিনগর এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও দেখা গেছে ব্যাপকভাবে। ১৪ জন প্রার্থীর এ আসনে নৌকা আর হাতপাখার এজেন্ট ছাড়া কোন এজেন্ট ছিল না।

ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির এজেন্ট না থাকার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেই কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টের বাইরে কোনো প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দেখেননি। 

কেন্দ্রে এজেন্ট দেখা যাচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাতো এজেন্ট বলতে পারে। এজেন্টরা না আসলে এজেন্ট থাকবে না।

বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, সেটাতো আমি জানি না। কেউ বলেছে আসতে পারে নাই। এ রকম বলেছে, আমার কাছে বলেনি।

ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট ও নেতাকর্মী না রেখে ঐক্যফ্রন্টের এসব কর্মকাণ্ড ও অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশল বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট সারাদেশে সহিংসতা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনের আগের রাতেই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হামলায় পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত একদিকে সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টি করে ভোটারদের মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে গণমাধ্যমের সামনে মিথ্যাচার করছে এবং ইভিএম নিয়ে হাস্যকর অভিযোগ তুলছে।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, এ নির্বাচনে বিএনপি যথাযথ পরিকল্পনা নিতে পারেনি। যার প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনের দিন তাদেরকে অভিযোগে সরব দেখলেও ভোটকেন্দ্রে নিরব দেখেছি।

তবে, সরকার সব রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচনের নামে তামাশা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার দুপুর দেড়টায় ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি।   

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি কারও মুখে কোনো আনন্দ উল্লাস দেখছি না। মিনিটে মিনিটে চারদিক থেকে ফোন আসছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ড. কামাল বলেন, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি-স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এমন অবস্থা। আমার আশা ছিল- অন্তত কোনো একটি কেন্দ্র থেকে কেউ বলবে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সে রকম কোনো খবর আমি পাইনি। বিকেলে তারা ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন।

এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা অভিযোগ নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল বলে প্রতীয়মান। তারা নির্বাচনের মাঠে তেমন ছিল না, ছিল ব্যস্ত অভিযোগ নিয়ে।  

আরকে// এসএইচ/ 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি