কিভাবে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে: ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত
প্রকাশিত : ২৩:২৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

বিজিএমইএ ভবন কিভাবে ভাঙা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি আরও বলেন, ভবন ভাঙতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
এরআগে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার জানিয়েছিলেন, ডিনামাইট ব্যবহার করে কন্ট্রোলড ডিমোলিশন বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভাঙা হতে পারে অবৈধভাবে নির্মিত বহুতল বিজিএমইএ ভবন।
এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে দেশে ডিনামাইট ব্যবহার করে কোনো ভবন ভাঙার প্রথম নজির হবে এটি।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেদিন সকাল থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইনসহ সব ধরণের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভবনটি থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর মূল ভবন ভাঙার কাজ শুরু করতে চাইলে বিজিএমইএ এবং ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিস কর্তৃপক্ষ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য দু’দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় চায়। পরে মালামাল সরিয়ে নেবার পরে ভবনটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সিলগালা করে দেয় রাজউক।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ইতোমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে আর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাছাই করা হবে ঠিকাদার। উপযুক্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকেই ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব দেয়া হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সরানো হবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ।
তিনি বলেন, হাতিরঝিলের মাঝখানে বিষফোঁড়ার মত বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি, ফলে অনাকাঙ্খিতভাবে ভবনটি সেখানে বেড়ে উঠেছে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকেরই রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, মঙ্গলবার ভবনটি ভাঙার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভবনটিকে আমাদের দখলে নিয়েছি, ভবনে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যদি উপযুক্তি সংস্থা পাই তাহলে তাদের সমন্বয়ে, আর যদি উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা রাজউকের পক্ষ থেকে এই বিল্ডিংটাকে উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার সে প্রক্রিয়ায় যাব। যেহেতু এ জাতীয় একটি ইমারত ভাঙতে হলে অন্যান্য যারা আগ্রহী প্রতিষ্ঠান তাদেরকে সুযোগ দেয়ার একটা বিধান রয়েছে। সেই সুযোগটাকে আমরা কাজে লাগাব। উপযুক্ত আহ্বানকারী না পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই ভাঙব। ভাঙার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে কারণ আমরা চাই রাষ্ট্রের চকৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে বেআইনি এ জাতীয় একটি ভবন টিকে না থাকুক।
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে না জানিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করেই আমরা ভবনটি ভেঙে ফেলব। সেক্ষেত্রে নানা রকম পরিকল্পনা রয়েছে। যারা টেন্ডারে অংশ নেবে তাদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করার মত কেউ আছে কি না সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। যদি না থাকে প্রয়োজনে আমরা বাইরে প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব।
র্যাংগস প্লাজা ভাঙার সময় প্রাণহানির কথা মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবারে আমাদের প্রস্তুতি বিজ্ঞান সম্মত, প্রযুক্তি সম্মত; যাতে এই ভবনটি ভাঙতে গিয়ে কোনোভাবে প্রাণহানি অথবা কোনো রকমের অনাকাঙ্খিত ক্ষতির মুখোমুখি না হই সে প্রস্তুতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
ভবনটি ভাঙতে ডিনামাইট ব্যবহার এবং সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সিভিল প্রশাসন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণায় এবং রাজউকই যথেষ্ট। আমরা এলাকার নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকের সাহায্য নিতে পারি কিন্তু ইমারতটি ভেঙে ফেলতে বাইরের অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে না।
যে পদ্ধতির কথার পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে সবটা সঠিকভাবে আসেনি। ২৪ এপ্রিলের পরে তথ্য পেয়ে যাবেন। আধুনিক প্রযুক্তিতে এমন সব কৌশল সৃষ্টি করা হয়েছে যা এই ভবনটি ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না, এক ঘণ্টার ভেতরে স্তূপ আকারে ওই জায়গায় বসে পড়বে।
‘ডিনামাইট প্রচলিত অর্থে একটা বোমার ব্যবহার, আসলে সেই ডিনামাইট না, নানারকমভাবে আছে। বাঘ মানেই সব সময় সুন্দরবানের বাঘ নয়। কখনো বাগ মানে ছাড়পোকা হয়ে যায়, সেই ডিনামাইট এখানে না। একটা পদ্ধতি আছে সেই পদ্ধতির পরিচিতিটা ডিনামাইট আকারে কিন্তু কোনোভাবে এটা ডিনামাইট বোমা মেরে বিল্ডিং ভেঙে ফেলার ডিনামাইট নয়, এটা একটা নির্মাণ প্রযুক্তি ভেঙে ফেলার একটা কৌশল। এটা প্রযুক্তি, কোনোভাবেই সেটা প্রচলিত অর্থে যে ডিনামাইট বোমা সেটা নয়।’
২৪ এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বাছাই। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কওর্ডার দিয়ে দেব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার আওতায় টোটাল ভবন ভেঙে সেখানের স্তুপ সরিয়ে ফেলাসহ তিন মাসের বেশি হবে। তিন মাসের মধ্যে জায়গাটা পরিস্কার হয়ে যাবে।
আরকে//
আরও পড়ুন