ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

ফনির আঘাত মোকাবেলায় প্রস্তুত ২৭৩৯ সাইক্লোন সেন্টার

প্রকাশিত : ১৮:৫৫, ২ মে ২০১৯ | আপডেট: ২১:৪৯, ২ মে ২০১৯

ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। সমুদ্র উপকুলীয় এলাকার দুই হাজার ৭৩৯টি সাইক্লোন সেন্টারও প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ত্রাণ কাজে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাত মোকাবেলায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সব সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার জন্যও বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় দুই হাজার ৭৩৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক। সব উপজেলার ইউএনওকে আশ্রয় কেন্দ্র, শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়ের সব অফিস খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে নগদ ৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া রুটে নৌচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরও ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিমে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে তিনজন করে সদস্য রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, মোট ৮৫২ জন টিমের সদস্যকে সম্ভাব্য দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ৯ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ এবং সাড়ে ৪ লাখ ওরস্যালাইনও মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কক্ষের নম্বর- ০৩১-৬৩৪৮৪৩।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার শঙ্কায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে সহায়তা দিতে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীনের নির্দেশে কন্ট্রোল রুম চালু করে চসিক। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য ও সেবা পেতে কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বরে (৬৩০৭৩৯, ৬৩৩৪৬৯) যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে চসিক।
সিটি মেয়রের একান্ত সহকারী রায়হান ইউসুফ বলেন, চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গাসহ উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সহায়তা দিতে মেয়রের নির্দেশে চসিক কাজ শুরু করেছে। চসিকের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ফণি চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করলে যাতে দ্রুত পরিস্থিত মোকাবিলা করা যায়- এ জন্য চসিকের স্বেচ্ছাসেবক, মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও স্যালাইন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরবাসীর যেকোনো সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিয়েছে নগর পুলিশও। নগরীর ১৬টি থানাকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুর রহমান। থানার পাশাপাশি সিএমপি সদর দফতরেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফনির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল জেটি থেকে সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেতের ওপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশন ধাপে ধাপে বন্ধ করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বন্দর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গর মিলিয়ে বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে মোট জাহাজ ছিল ১৬৮টি। এর মধ্যে পণ্যবোঝাই জাহাজ ছিল ৮০টি। আবার এর মধ্যে ১৬টি জাহাজ জেটিতে পণ্য খালাসের জন্য নোঙ্গর করা ছিল। বাকি ৬৪টি জাহাজ ছিল বহির্নোঙ্গরে। ৬ নম্বর বিপদসংকেত জারির পর জেটি থেকে ১৬টি জাহাজকে সরানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বন্দরের জেটিতে ও সংলগ্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনার থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, কনটেইনার মুভারগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ফনি উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কায় সীতাকুন্ড উপজেলার বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ভাঙার জন্য বিচিং করা (কূলে টেনে আনা) জাহাজগুলো পাথর বা পানি ঢুকিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নৌ বাণিজ্য দফতর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফনি আঘাত হানার শঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছেন বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জেলেরা। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নগরের ফিশারি ঘাটসহ কর্ণফুলী তীরবর্তী বিভিন্ন ঘাটে আশ্রয় নেন তারা।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি. মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমূদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি