ঢাকা, শনিবার   ০৫ জুলাই ২০২৫

পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

৭৮ মাস বেতন বন্ধ: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেয়ার দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৪, ২৫ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫৫, ২৫ জুলাই ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

দেশের পৌরসভাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার থেকে ৭৮ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। অবসর যাওয়া ৯৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরও বেতন বকেয়া রয়ে গেছে। বকেয়া এ বেতন-ভাতা ও পেনশন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীরা। সারাদেশ থেকে ৩২৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক ও ফুটপাতের ওপর কাগজ এবং তাবু বিছিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা। আজ কর্মসূচির ১২ তম দিন।

তাদের দাবি, তারা ৪ থেকে ৭২ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া ছাড়াই অফিস করছেন। কোনো সময় পৌর সভার নিজস্ব আয় এলেই কেবল বেতন হয়, না হলে বছরের পুরো সময় চলে বেতন ছাড়া। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারিভাবে বেতন দেওয়ার আশ্বাস না আসবে ততক্ষণ তারা ঘরে ফিরবেন না বলে জানান।

অবস্থান ধর্মঘট পালনকারীরা জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ তাদের বেতনের জন্য নির্ভর করতে হয় পৌরসভার নিজস্ব আয়ের ওপর। যদি কোনো পৌরসভার আয় না থাকে তবে তাদের বেতন ছাড়াই চলতে হয়। এভাবে কারো কারো ৪ থেকে ৭২ মাস পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে।

তারা বলেন, আমাদের বেতন আসে নিজস্ব আয় থেকে আর ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতনের ৭৫ শতাংশ আসে সরকারি কোষাগার থেকে। একই নিয়মে নিয়োগ অথচ বেতনের ক্ষেত্রে দুই নীতি হতে পারে না। আমাদেরও একই নিয়মে বেতন দিতে হবে।

লাঙ্গলকোট পৌরসভা থেকে আন্দোলনে আসা আব্দুল মান্নান নামে একজন বলেন, আমরা ১৯ মাস ধরে বেতন পায় না। পৌরসভার যা আয় এর চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হওয়া বাড়তি কোনো টাকা থাকে না, এ কারণে সব কর্মচারীরা বেতন ছাড়াই চলছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আলিম মোল্লা বলেন, আমাদের ৩২৮টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র ৩৩টি পৌরসভার বেতন-ভাতা নিয়মিত বাকিদের কারো ৭২ মাস পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে। এসব পৌরসভার ৩৫ হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পৌর আয়ের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আয় হলে বেতন হয় না হলে বেতন দেওয়া হয় না।

এতো বকেয়া হলে একজন কর্মচারী কীভাবে চলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌর কর্মচারীদের সবার বাড়ি পৌর এলাকার মধ্যে। তাদের বাড়ি ভাড়া লাগে না, অন্য কোনো কাজ করে সংসারের খরচ চালাতে হয়।

বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দাবি আদায়ে গত ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এরই মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার সচিব মোবারক হোসেন আন্দোলনরত অবস্থায় মারা গেছেন। আজ তার দাফন করা হয়েছে। তার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোন সাড়া মেলেনি।

তবে আজ সকাল ১০টাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক সুস্থতার জন্য দোয়া অনুষ্ঠান করেছি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বলেছেন আপনি (মন্ত্রী) চাকরি দিয়েছেন, আপনিই (মন্ত্রী) তাদের বেতনের ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে সিদ্ধান্তের জন্য ঝুলে আছে। আশা করি আমাদের দাবি পূরণ হবে। 

কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন শান্তাহার পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর আতোয়ার হোসেন। গত ২৮ বছরের চাকরি জীবনে তার ৭৮ মাস-ই বেতন বকেয়া। তার দুই ছেলে। বড় ছেরে কষ্ট করে ডিপ্লোমা ও ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও আর তাদের লেখাপড়া এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। অর্থ সংকটে সংসার যে তার আর চলছে না। পাড়ার মুদি দোকানে বাকী কেনাসহ অনেক জায়গাই ঋণ করে চলতে হচ্ছে তার।

একই কথা শোনালেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী করনিক মো. হাবিবুর রহমান। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, গত ৮ বছর ধরে আমি এ চাকরি করছি। কিন্তু গত ৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। বাপ-মা ও  প্রতিবেশির কাছে ধারদেনা করে চলছি। দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন হয়েছে মান সম্মান নিয়ে বেচে  থাকার উপায় নেই।

কর্মসূচিতে বান্দরবন পৌরসভা থেকে আসা সহকারী কর আদায়ক য়ইসাচিং মারমা বলেন, আমার চাকরির বয়স ৩১ বছর। গত ১১ মাস কোন বেতন পায়নি। অনেক ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। ব্যাংকে এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছি।
ময়মনসিংহের মুগদাগাছা পৌরসভা থেকে আসা টিকাদানকারী খালেদা বেগম বলেন, আমি গত ২০০১ সালে চাকরি নেই। গত ৮ মাস ধরে বেতন পায়নি। দুই মেয়ে ও স্বামী সংসার নিয়ে বড়ই কষ্টে আছি আমি। বড় মেয়ের টিউশনির টাকায় চলে কোন রকম। 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার উপ সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মুন্সি মো. আবু জাফর বলেন, ১৯৯২ সালে আমি চাকরি নিয়েছি। গত ৫ মাস ধরে আমি বেতন পায় না। দুই মেয়েসহ আমার চার সদস্যের পরিবারের খরচ মেটাতে খুবই বিপাকে পড়েছি। সরকার আমাদের প্রতি একটু সদই হলেই আমাদের এ কষ্ট লাঘব হবে।

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ফটোকপি মেশিন অপারেটর আব্দুল খালেক বলেন, আমি ২০১১ সালে চাকরিতে যোগ দেয়। গত ৩৮ মাস আমি বেতন পাচ্ছি না। আয় না থাকায় মায়ের ঔষদ পর্যন্ত কিনতে পারছি না। আর মাকে সেবা করার জন্য নিজের বিয়ের কথাও ভাবতে পারছি না। চরম একটা অস্থিতিশীল ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের দাবি মানার কোন ঘোষণা না আসলে আমরা বঙ্গভবন, গণভবন, ও  সচিবালয় ঘেরাওসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হবো।
আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি