মফস্বলেও বাড়ছে ডেঙ্গু: ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ১৭১২ জন
প্রকাশিত : ১৯:২১, ১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৪৮, ১ আগস্ট ২০১৯
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দেখতে দেখতে প্রায় মহামারির রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গুজ্বর। রাজধানীর পাশাপাশি মফস্বলেও এখন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় ১৭১২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। গড়ে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটে একজনের বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই এখন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৬২ জন। রাজধানী বাদ দিলে একদিনেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপর খুলনা ও বরিশালে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ডেঙ্গু রোগ বিস্তারের আশঙ্কায় সারাদেশের হাসপাতালগুলো বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নির্ণয়ের কীট পর্যাপ্ত থাকলেও বিদেশ থেকে আরো কিট আনছে।
এদিকে, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যদিও সরকারী হিসাবে বলা হয়েছে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৭ হাজার ১৮১ জন হলেও মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। যদিও বেসরকারী হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেকে বেশি বলে জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়ালেও ১২ হাজারের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রদত্ত তথ্যমতে সর্বমোট রোগীর সংখ্যা-
১. ঢাকা- (ঢাকা শহর ছাড়া) ১৪৫ জন।
২. চট্টগ্রাম- ৯৪ জন।
৩. খুলনা- ৭৬ জন।
৪. রংপুর- ৩৩ জন।
৫. রাজশাহী- ৫৮ জন।
৬. বরিশাল- ৬৩ জন।
৭. সিলেট- ৩১ জন।
৮. ময়মনসিংহ- ৬২ জন
সর্বমোট- ৫শ ৬২ জন
সরেজমিনে দেখা গেছে- বিপুল পরিমাণ রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি ২০জন আক্রান্ত হয়েছে। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা বরিশাল নগরীতে। খুলনা বিভাগের যশোরে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ জন।
জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা-
১. গাজীপুর- ২০ জন।
২. জামালপুর- ১৭ জন।
৩. নোয়াখালী- ১২ জন।
৪. যশোর- ১৭ জন।
৫. বগুড়া- ২৫ জন।
৬. রংপুর- ১২ জন।
৭. বরিশাল- ৩৩ জন।
৮. সিলেট- ১৪ জন।
খুলনার হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৮৩ জন। সিভিল সার্জন জানালেন, রোগি বাড়লেও আগেভগেই সব প্রস্তুতি নেয়া আছে।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ডেঙ্গু কর্ণার ও ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে সংস্থাটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার ভয়াবহতা এমন সময় বাড়ছে, যেখানে আর ক’দিন পর দেশে পালিত হবে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-আজহা। এ উপলক্ষে আগামী সপ্তাহ থেকেই লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু নিয়ে অনেক ব্যবসায়ী রাজধানী আসবেন। এর আগেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি বা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গু। তাই সময় থাকতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া গ্রামগঞ্জে খালে বিলে এডিস মশার লার্ভা ছড়িয়ে পড়লে পরবর্তীতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ২০১৮ সালে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০ হাজার ১৩৮ জন রোগী। সেটি ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
টিআই/
আরও পড়ুন